লখনউয়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উপহার তুলে দিচ্ছেন স্থানীয় ভাস্কর। রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই
৩৭০ অনুচ্ছেদ, রাম মন্দির এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। এটাই ভারতবর্ষের সর্বরোগহর ‘ত্রিফলা’। এই তিনেই ‘১৩০ কোটি ভারতবাসী সব সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন’। বুধবার লখনউয়ে একটি অনুষ্ঠানে এমনই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি, শিল্পে মন্দা, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, আকাশছোঁয়া পেঁয়াজের দাম— এ সব কি তাহলে কোনও সমস্যাই নয়? মোদী যে ভারতবাসীর কথা বলেছেন, তাঁদেরই একটা বড় অংশ অবশ্য তুলছেন এই প্রশ্ন।
সিএএ-এনআরসি-এনপিআর নিয়ে উত্তপ্ত আবহের মধ্যেই বুধবার লখনউতে অটলবিহারী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, রাম মন্দির ইস্যু শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথও পরিষ্কার। ১৩০ কোটি ভারতবাসী আস্থার সঙ্গে সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।’’
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে দু’টি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি তথা এনডিএ সরকার। প্রথমটি ৫ অগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া। উপত্যকাকে কার্যত গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে যে ভাবে আইন কার্যকর করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মোদী সরকার তাকে নিজেদের সাফল্য হিসেবেই প্রচার করে আসছে। দ্বিতীয়ত, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ। এই বিল আইনে পরিণত হতেই তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে কার্যত গোটা দেশ। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে একাধিক রাজ্যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পাশাপাশি অনেকের প্রাণহানি হয়েছে। তবু এটাও নিজেদের সাফল্যের তালিকায় উপরের দিকেই রাখছেন মোদী-অমিত শাহরা।
তৃতীয়টিতে অবশ্য সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দির তৈরিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। তবে রায় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কৃতিত্ব মোদী সরকার আগাগোড়াই নিয়ে আসছে। এই তিন সাফল্যের কথা তুলে ধরেই মোদী এ দিন বোঝাতে চেয়েছেন, কার্যত দেশবাসীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। অথচ, তিনটিই নীতিগত প্রশ্ন, যার সঙ্গে আম ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন বা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কোনও যোগ নেই।
বিরোধীরা অবশ্য বরাবরই অভিযোগ করেন, মোদী-২ সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর স্লোগান দিলেও আদপে সেই ‘বিকাশ’-এর দেখা নেই। অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, বেসরকারিকরণ, শিল্পে ভাটার মতো গুরুতর সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে কখনও মেরুকরণ, কখনও পাকিস্তান, কখনও বা জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে সব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
সিএএ-এনআরসি বিক্ষোভে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তাল হয়েছে লখনউ। গোটা উত্তরপ্রদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। বুধবার সেই লখনউয়ে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা ভাঙচুর করেছেন, তাঁদের আত্মসমীক্ষা করা উচিত। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা উচিত, যেটা করেছেন, সেটা কি ঠিক করেছেন?’’
এই প্রসঙ্গেই এ দিন নীতিশিক্ষার পাঠও দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘ভাল রাস্তা, পরিবহণ, নিকাশি ব্যবস্থা আমাদের অধিকার। কিন্তু সেগুলি রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য। উন্নতমানের শিক্ষা যেমন আমাদের অধিকার, তেমনই সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করাও আমাদের কর্তব্য। সুরক্ষিত পরিবেশ আমাদের অধিকার, পুলিশের কাজকেও সম্মান করা উচিত।’’