কার্ফু অমান্য করে, রাস্তায় নেমে, গ্যারেজে রাখা ও রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রবিবার ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স।
সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন, এমন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা দেশে ফিরে আসছেন। তাঁদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকছেন। একই সঙ্গে ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান, এমনকি মলদ্বীপের ছাত্রছাত্রীরাও এ দেশে আসছেন। নেপাল এবং ভুটানের পড়ুয়ারা এর পরে স্থলসীমান্ত দিয়ে নিজেদের দেশে চলে যাবেন। মলদ্বীপের ছাত্রও দেশে ফিরে যেতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। এই পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদে ভারতে এসে নিজেদের জায়গায় চলে যেতে পারেন, সে জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিএসএফ। বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল, ঘোজাডাঙা, নদিয়ার গেদে এবং মালদহের মহদিপুরে বিশেষ হেল্প ডেস্ক খুলেছে। এ দিনই প্রথম একুশের মঞ্চ থেকে, পরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ছাত্র-সহ যাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসছেন, তাঁদের সব রকম সহায়তা করবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। উদাহরণ হিসাবে মমতা জানিয়েছেন, বালুরঘাটের কাছে হিলি সীমান্ত দিয়েই প্রায় ৩০০ জন ছাত্র ভারতে ঢুকেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জনের কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অশান্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভুটান এবং নেপালের অনুরোধে এই দু’টি দেশের পড়ুয়াদেরও ভারতে আসতে সাহায্য করা হচ্ছে। বিএসএফ জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত এই চারটি সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে মোট ১২০৮ জন ছাত্রছাত্রী ভারতে ঢোকেন। তার মধ্যে ১০৪৫ জন ভারতীয়, ১৫২ জন নেপালি, ৪ জন ভুটানি এবং ৭ জন বাংলাদেশের নাগরিক। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বাকি সীমান্তগুলি দিয়ে আরও বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী ভারতে প্রবেশ করেন।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি এ কে আর্য বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে ফেরানোর কাজ সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য বিজিবি-র সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রাখছে বিএসএফ। রাতেও যাতে নিরাপদে পড়ুয়ারা ফিরতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’’ প্রত্যাবর্তনকারী পড়ুয়াদের সুবিধার জন্য পেট্রাপোলের ইমিগ্রেশন ডেস্ক সর্বক্ষণ খোলা রাখা হয়েছে। মেডিক্যাল ডেস্কও খুলেছে বিএসএফ। রবিবার দুপুরে ২০ জন ছাত্রীর একটি দল ঢাকা থেকে পেট্রাপোলে পৌঁছয়। তাঁরা ঢাকার একটি মহিলা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। তাঁরা গুজরাত ও কাশ্মীর থেকে গিয়েছিলেন। ফাইজা নামে এক ছাত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কার্ফু চলছে। তাই দেশে ফিরে এলাম। এখন আমরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করছি।’’
এর পাশাপাশি কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা দিয়েও এ দিন ৪৪১ জন পড়ুয়া ফিরেছেন, যাঁদের মধ্যে ২৪৩ জন ভারত, ১৭৩ জন নেপাল, ২৫ জন ভুটান এবং এক জন মলদ্বীপের
ছাত্র। এঁদের বেশিরভাগই রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া। হিলি সীমান্ত দিয়ে বগুড়া, ঢাকা-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা ভারতে ঢুকেছেন। মালদহের মহদিপুর দিয়েও ফিরেছেন একশোর বেশি ডাক্তারি পড়ুয়া। শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৪ জন ছাত্রছাত্রী ভারতে প্রবেশ করেছেন। সেই দলে উত্তরপ্রদেশের এক পড়ুয়া, নেপালের ১০ এবং ভুটানের তিন পড়ুয়া রয়েছেন।
একই ভাবে বাংলাদেশের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবেড়িয়া ও ঢাকার মেডিক্যাল কলেজে পাঠরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের একাংশ ত্রিপুরার আগরতলা ও শ্রীমন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসছেন, জানিয়েছে বিএসএফ। বিএসএফের ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের আইজি পটেল পুরুষোত্তম দাস জানিয়েছেন, ব্রাক্ষণবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের এক পড়ুয়ার বাবা-মা ফোন করে সাহায্য চান। বিজিবি-র সাহায্যে সেই পড়ুয়াকে ফেরানো হয়েছে। শনিবার ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ৩৬৫ জন পড়ুয়া ভারতে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে বিএসএফ।
ত্রিপুরা সরকারের পরিবহণ দফতরের আরটিও দিবাকর দাস জানিয়েছেন, ওই ছাত্রছাত্রীদের কয়েক জনকে সেখানকার ভগত সিংহ যুব আবাসে রাখা হয়। অনেককে বিমানে ও ট্রেনে করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।