ফাইল চিত্র।
পায়ের তলায় সর্ষে যাদের, তাদের তো বটেই, প্রায় দু’বছরের ঘরবন্দিদশার পরে অন্যদেরও মুক্তির স্বস্তি কোথাও বেরিয়ে পড়ার উৎসাহ জোগাচ্ছে। কারণ, ভয়াল অতিমারি ফণা নামানোর পরে বিধিনিষেধ শিথিল হতে হতে এখন কার্যত শূন্য। সংক্রমণের আশঙ্কাও কমতে কমতে তলানিতে। এর জেরে বিশেষত দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকিটের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানাচ্ছে রেল। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কোচি ছাড়াও উত্তরবঙ্গ, গুয়াহাটি, পুরী, গোরক্ষপুর-সহ অতি বা অনতিদূরের বিভিন্ন রুটে টিকিটের চাহিদা বেশ কিছু ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
রেলর খবর, টিকিটের চাহিদার গ্রাফ দোলের পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। এবং এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত টিকিটের এমন ব্যাপক চাহিদা বজায় থাকতে পারে বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তাদের একাংশ। সেই সঙ্গে তাঁদের বিশ্বাস, পুরী, নিউ জলপাইগুড়ি, গুয়াহাটি-সহ বেশ কিছু রুটে টিকিটের চাহিদা অটুট থাকবে জুনের শেষ পর্যন্ত।
করোনা পর্বের মন্দা কাটিয়ে যাত্রীদের ট্রেন-সফরের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকিটের চাহিদার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে রেল। চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হচ্ছে। রাজধানী, দুরন্ত, শতাব্দীর মতো প্রথম সারির এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। অনলাইনে আইআরসিটিসি বা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজ়ম কর্পোরেশনের ওয়েবসাইট থেকেও টিকিট কাটার প্রবণতা বেড়েছে যাত্রীদের। আইআরসিটিসি সূত্রের খবর, দৈনিক সাড়ে ১২ লক্ষের জায়গায় এখন সাড়ে ১৬ লক্ষের বেশি যাত্রী টিকিট কাটছেন। শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গগামী দার্জিলিং মেল, পদাতিক, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে টিকিটের চাহিদা ১৫০ শতাংশের কাছাকাছি। বছরের অন্যান্য সময়ে হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেসের টিকিটের চাহিদা ৬৫-৭০ শতাংশের কাছাকাছি থাকে। সেই জায়গায় এখন ওই সব ট্রেনে টিকিটের খিদে বেড়েছে ১০০ থেকে ১১০ শতাংশ। সরাইঘাট, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের টিকিটেরও চাহিদা বেশ ভাল। এপ্রিলের বেশ কিছু দিন বাগডোগরা বিমানবন্দরের পরিষেবা বন্ধ থাকছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে কোনও উড়ানই ওঠানামা করতে পারবে না। ফলে যাত্রীদের যে-বিশাল অংশ উড়ানে শিলিগুড়ি যাতায়াত করেন, তাঁরাও ট্রেনের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন। এই চাহিদার ফলে কলকাতা-শিলিগুড়ি রুটের বাসে কোথাও কোথাও ভাড়া লাগছে মাথাপিছু তিন হাজার টাকা।
ট্রেনে স্বাভাবিক ভাবেই চাহিদা বেড়েছে পুরীর টিকিটের। পরিস্থিতি সামাল দিতে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল নিউ জলপাইগুড়ি, গুয়াহাটি, কামাখ্যা-সহ বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫০ জোড়া গ্রীষ্মকালীন বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে। রেল সূত্রের খবর, বেশি যাত্রীকে সফরের সুযোগ দিতে এবং টিকিটের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে। প্রায় তিন বছর পরে উত্তরবঙ্গের রুটে একসঙ্গে এত বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে।