আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে রেলের প্রায় তিন লক্ষ ‘বয়স্ক’ কর্মীকে ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল মন্ত্রক। নতুন নিয়োগ দূরে থাক, আপাতত ‘জনস্বার্থে’-র কথা বলে কর্মী ছাঁটাই অভিযানে নামতে চাইছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। শুধু রেলই নয়, সূত্রের মতে, কর্মী কমানোর বার্তা গিয়েছে অন্যান্য মন্ত্রকের কাছেও।
অথচ, লোকসভা ভোটের আগে প্রথম ধাপে ১ লক্ষ ২০ হাজার এবং পরের বছরগুলিতে আরও কয়েক লক্ষ— সব মিলিয়ে ৫ বছরে ৫ লক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রেল। কিন্তু সেই নিয়োগের প্রতিশ্রুতি এখন বিশ বাঁও জলে। উল্টে যে ভাবে রেল কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকে যাচ্ছে, তাতে ক্ষুব্ধ ইউনিয়নগুলি। এক দশক ধরে চালক, সহকারী চালক, গেটম্যান, সহকারি স্টেশন মাস্টার, গ্যাংম্যান-এর মতো রেল পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রায় দু’লক্ষ পদ খালি পড়ে। এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ না করে, উল্টে কর্মী ছাঁটাই হলে নিত্যদিনের কাজ চালানোয় বিরাট অসুবিধা হবে, বিশেষ করে যাত্রী সুরক্ষার দিকটি প্রবল ভাবে অবহেলিত হবে বলেই মনে করছে রেলওয়ে মেনস ফেডারেশন।
রেল সূত্রের যুক্তি, ছাঁটাইয়ের চিন্তার পিছনে অন্যতম কারণ আর্থিক সঙ্কট। এখন ১০০ টাকা আয় করতে রেলের খরচ প্রায় ৯৮ টাকা। পণ্য ও যাত্রিভাড়া থেকে আসা আয়ের গোটাটাই চলে যাচ্ছে বেতন ও পেনশন খাতে। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই কর্মী কমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিল অর্থ মন্ত্রক। একই সুপারিশ ছিল নীতি আয়োগের। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে তাই কর্মী সঙ্কোচনের মতো কঠিন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভাবছে সরকার। ফি বছর রেলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী অবসর নেন। তাঁদের ধরে সংখ্যা তিন লক্ষের কাছাকাছি। রেলের একটি সূত্রের মতে, জনস্বার্থের নিয়মে কোনও কর্মীকে অবসরের চিঠি দেওয়া হলে আর্থিক ভাবে লাভ মন্ত্রকেরই। সে ক্ষেত্রে ওই কর্মীকে তিন মাসের বেতন দিতে হবে। কোনও কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিলে তাঁকে অন্তত এক বছরের বেতন দিতে হত রেলকে। তাই সব দিক ভেবেই কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতরের ফান্ডামেন্টাল রুল-৫৬, পেনশন আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। রেলের বক্তব্য, ওই আইনে জনস্বার্থে কোনও সরকারি কর্মীকে অবসর নিতে বাধ্য করা সম্ভব। রেলের বক্তব্য, ওই আইন এত দিন খাতায় কলমে ছিল, এ বার বাস্তবে রূপায়িত করতে তৎপর হয়েছে মোদী সরকার।
আরও পড়ুন: গ্রামে রাত কাটাতে নির্দেশ, ‘দিদিকে বলো’ দাওয়াই মমতার
রেলের সব জ়োনের শীর্ষ কর্তাদের বলা হয়েছে, ৯ অগস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জ়োনের কর্মীদের ভিতর থেকে ছাঁটাই তালিকা পাঠাতে হবে রেল বোর্ডে। যে তালিকায় ৫৫ বা তাঁর বেশি বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে কারা চাকরি করার যোগ্য আর কারা নন, তা উল্লেখ করতে হবে। কর্মীদের গত পাঁচ বছরে উপস্থিতি, ক’দিন ছুটি নিয়েছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, নিয়মানুবর্তিতা, খরচ বাঁচাতে তিনি কতটা সচেতন— এই দিকগুলি বিবেচনা করে ব্যক্তিভিত্তিক রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য ওই তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও, একটি সূত্রের দাবি, এ ও বি গ্রুপের অফিসারদের জন্যও এমন তালিকা প্রস্তুত করা হবে।