কাশী-মহাকাল এক্সপ্রেস।
বিতর্ক এড়াতে সংরক্ষিত আসন বাতিল করল রেল! তাও ভগবান শিবের!
অথচ ট্রেনটি তাঁরই নামে। কাশী-মহাকাল এক্সপ্রেস। চলবে বারাণসী থেকে ইনদওর। ধার্মিক স্থানগুলিকে ঘিরে পর্যটনকে উৎসাহ দিতে আইআরসিটিসি-এর ওই বিশেষ ট্রেন ছুঁয়ে যাবে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে শিবের উপস্থিতি রয়েছে এমন তিন শহরকে। বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ, উজ্জয়িনী শহরের মহাকালেশ্বর ও ইনদওরের পাশে ওঙ্কারেশ্বরকে। যাত্রীদের জন্য নিরামিষ খাবার ছাড়াও ট্রেনে থাকছে শিব-স্ত্রোত্র পাঠ, ভজন, ধর্মীয় সঙ্গীত।
এখানেও না থেমে ট্রেনে খোদ মহাকাল অর্থাৎ শিবের জন্য একটি আসন পাকাপাকি সংরক্ষণ করে রীতিমতো মন্দিরের চেহারা দিয়ে ফেলে রেল। তারা শুরুতে জানায়, প্রতিটি যাত্রায় যাত্রীদের সঙ্গেই সফর করবেন আসনে অধিষ্ঠিত মহাকাল। ওই উদ্যোগ ঘিরে বিতর্ক শুরু হতেই পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। যুক্তি দেয়, গত কাল ওই ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন থাকায় শিবপুজো করা হয়। ভবিষ্যতে আর হবে না। ওই আসনে যাত্রীরাই যাতায়াত করবেন।
কোচ নম্বর বি-৫। আসন সংখ্যা ৬৪। যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত ওই আসনটিকে ঘিরে। গত কাল বারাণসী থেকে ওই ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যাত্রা শুরুর আগে সেই ট্রেনের বি-৫ কামরার ৬৪ নম্বর সাইড আপার আসনটি মুড়ে দেওয়া হয়েছিল লাল সেলোফেন কাগজে। কামরার দেওয়ালে লাগানো হয়, শিব, কালী, রাম-সীতার ছবি। প্লাস্টিকের মালা ঝুলিয়ে পুজো বেদীর চেহারা দেওয়া হয় আসনটিকে। টিকিট পরীক্ষক থেকে রেল কর্মী— যারাই এসেছেন তাঁরাই ওই আসনে এক বার মাথা ঠুকেছেন। আসন ঘিরে রেল কর্মীদের উৎসাহ দেখে যাত্রীদের চমক দিতে আসনটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় রেল। গত কালই উত্তর রেলের মুখপাত্র দীপক কুমার জানান, ‘‘এই প্রথম বার কোনও সংরক্ষিত আসন শিবের জন্য ছেড়ে রাখা হল। ওই আসনটি ছোট মন্দিরের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে যাত্রীরা বুঝতে পারেন ওই আসনটি মহাকালের জন্য সংরক্ষিত।’’
বিষয়টি ছড়িয়ে পড়তে আপত্তি তোলেন হায়দরাবাদের এমআইএম নেতা তথা লোকসভার সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। মন্তব্য না-করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় (পিএমও)-র উদ্দেশে সংবিধানের প্রস্তাবনার পাতার ছবি টুইট করেন। বোঝাতে চান, ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। চলন্ত ট্রেনে মন্দির নিয়ে আপত্তি তোলেন অনেক হিন্দুও। সূত্রের খবর, ওই উদ্যোগ ভাল ভাবে নেয়নি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। মূলত পিএমও-র উদ্যোগে কয়েক ঘণ্টায় বিবৃতি পাল্টে ফেলে ট্রেন চালানোর দায়িত্বে থাকা আইআরসিটিসি ও রেল দফতর। আইআরসিটিসি আজ দুপুরে বিবৃতিতে জানায়, ‘কাশী-মহাকাল এক্সপ্রেসের কর্মীরা শ্রী মহাকালের অস্থায়ী ফটো লাগিয়ে নতুন প্রকল্পের সাফল্যের জন্য পুজো করেছিলেন। এই পুজো কেবল ট্রেনটির উদ্বোধনী যাত্রাকে কেন্দ্র করে করা হয়েছিল।’ পরে রেল জানায়, যাত্রীরা ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই ট্রেনে চড়তে পারবেন এবং ৬৪ নম্বর আসনের টিকিটও কাটতে পারেন।