শ্রীপতি টুডু। নিজস্ব চিত্র।
আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে কী লেখা আছে, তা জানার আগ্রহে সংবিধান পড়া শুরু করেছিলেন তিনি। তখনই মাথায় আসে, দেশের সংবিধান নিজেদের চেনা হরফে তুলে ধরতে পারলে আরও অনেকে তা জানতে পারবেন। সে ভাবনা থেকে অলচিকি লিপিতে সংবিধান অনুবাদ করে ফেলেছেন পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালি বিভাগের শিক্ষক শ্রীপতি টুডু। রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তাঁকে কুর্নিশ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশে অনেকেই নিজেদের ভাষা শক্তিশালী করার কাজ করছেন। এমনই এক জন মানুষ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার শ্রীপতি টুডু। তিনি সাঁওতাল সমাজের জন্য তাঁদের নিজস্ব লিপিতে সংবিধান অনুবাদ করেছেন। আমি তাঁর ভাবনা ও প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি।’’ তা শুনে শ্রীপতি বলেন, ‘‘কাজের স্বীকৃতি পেলে ভাল লাগে। এই স্বীকৃতি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।’’
আদতে বাঁকুড়ার খাতড়ার মুড়াগ্রামের বাসিন্দা শ্রীপতি প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সন্তান। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছোট। বছর বত্রিশের শ্রীপতি জানান, মাতৃভাষার প্রতি টান শৈশব থেকেই। বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি হাইস্কুল থেকে সাঁওতালি মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তার পরে শিক্ষকতা করেছেন পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির ধসকা স্কুল ও ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু সরকারি কলেজে। ২০১৬ সালে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখন তিনি কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইএলএসআর)-এর সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।
শ্রীপতি জানান, শিক্ষা, চাকরি, জনপ্রতিনিধিত্ব— নানা ক্ষেত্রে আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে জানতে সংবিধান পড়া শুরু করেন। তার পরেই তা অনুবাদে হাত দেন। ২০২১ সালে সে কাজ শেষ করেছেন। দিল্লির একটি প্রকাশনা সংস্থা অলচিকি হরফে তা প্রকাশ করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার অনুবাদটি মূল সংবিধানের চেয়ে কিছুটা সংক্ষিপ্ত হয়েছে। কারণ, কিছু জায়গা আমি শুধু মূল বিষয়টি ছুঁয়ে গিয়েছি।’’ এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কলা বিভাগের শিক্ষিকা সোনালি মুখোপাধ্যায়ের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথের ৬৫টি কবিতা সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন বলে জানান তিনি।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সাঁওতাল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক শত্রুঘ্ন মুর্মু বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী, শ্রীপতি টুডুর এই কাজ এ রাজ্যে আমাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় গতি আনবে। ওঁকে অভিনন্দন।’’ ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর পুরুলিয়া জেলা পারগানা রতনলাল হাঁসদা বলেন, ‘‘শ্রীপতির এই কাজ সাঁওতালি ভাষা চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।