Indian Budget 2023

উনিশের অঙ্ক চব্বিশের আগেও, মধ্যবিত্তের ভোট টানতে মোদীর রাস্তায় কার্পেট বিছোলেন নির্মলা

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটে আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়েছিল মোদী সরকার। ২০২৪ সালের ভোটের আগে আগে একই পথে হাঁটলেন নির্মলা। নেপথ্যে কোন রাজনৈতিক পরিকল্পনা?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৯
Share:

বাজেটে রাজনীতির গাঢ় রং। অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। আর সেই ভোটে বড় ভরসা চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত। তাঁদের খুশি করতে পারলে যে ভোটের ঝুলি ভরে সেটা পরীক্ষিত সত্য। ২০১৯ সালে সেই সাফল্য দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি। এ বার ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে সেই একই পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগের লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে মুখে অন্তর্বর্তী বাজেটে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বার ভোটের এক বছর আগেই সেই সীমা বাড়িয়ে ৭ লাখ টাকা করা হল। বিরোধী আসনে থাকার সময় থেকেই আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সরব হয় বিজেপি। ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই সেই দাবি তুলেছিলেন প্রয়াত অরুণ জেটলি। পরে তিনি মোদীর অর্থমন্ত্রী হন। তবে আগে থেকেই আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ৫ লাখ টাকা করার সওয়াল করেছিলেন। যদিও জেটলি নিজে সে কাজ করেননি।

Advertisement

২০১৪ সালে জেটলি তাঁর প্রথম বাজেটে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করেছিলেন। মোদী সরকার প্রথম বাজেটে পুরস্কৃত করেছিল মধ্যবিত্তকে। কারণ, দেশের মধ্যবিত্তদের বড় অংশের ভোটেই বিজেপি বড় শক্তিতে ক্ষমতায় আসে। সে বার ৮০সি ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণও ১.১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১.৫ লাখ টাকা করেছিলেন জেটলি। এর পরে বাকি বছরগুলিতে সে ভাবে আয়কর কাঠামোয় পরিবর্তন আনেননি জেটলি।

শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রথম মোদী সরকারের শেষ বাজেট পেশ করতে পারেননি জেটলি। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসাবে ভোটের বছরে বাজেট পেশ করেন পীযূষ গয়াল। আর সেখানেই ছিল মধ্যবিত্তের জন্য বড় চমক। লোকসভা ভোটের আগে জনদরদি ভাবমূর্তি তুলে ধরার সেটাই শেষ সুযোগ ছিল মোদী সরকারের কাছে। সেই সুযোগের পুরোপুরি ফায়দা তোলে কেন্দ্র। অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘুরপথে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড়ের ঘোষণা করেন পীযূষ গয়াল। ঘুরপথে কারণ, আদপে আয়করের যে ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছিল, তাতে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। কিন্তু ছাড় এমন ভাবে বাড়ানো হয় যাতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও কর দিতে হবে না। সে বার, করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে কার্যত কোনও সুবিধাই দেওয়া হয়নি। আয়করের ঊর্ধ্বসীমা যে আড়াই লক্ষ টাকা ছিল, তাতে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।

Advertisement

যদিও তাতে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে অসুবিধা হয়নি বিজেপির। ২০১৪ সালে ২৮২ আসনে জেতা বিজেপি ২০১৯ সালে পায় ৩০৩টি আসন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন আয়কর ছাড়ে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের সুবিধা দেওয়া অন্যতম কারণ ছিল বিজেপির ভাল ফলের নেপথ্যে। বুধবার বাজেট বক্তৃতায় নির্মলা যে ঘোষণা করেছেন তাতে কি সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই রয়েছে?

শুধু লোকসভা নির্বাচনই নয়, তার আগে চলতি বছরেই ৯ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচন হতে পারে কাশ্মীরেও। সেই দিকে তাকিয়েই কি মধ্যবিত্তকে এতটা সুবিধা করে দিলেন নির্মলা? তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আয়কর ছাড়ের সীমা ৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ লক্ষ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কারও বছরে ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হলে ৪৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। যা আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। যাঁর ১৫ লক্ষ টাকা বাৎসরিক আয় তাঁকে দেড় লক্ষ টাকা কর দিতে হবে। আগে দিতে হত ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা।’’

বিস্তারিত বাজেট প্রস্তাবে কত টাকা পর্যন্ত আয়ে কত শতাংশ কর তার হিসাব থাকলেও নির্মলা তাঁর বক্তৃতায় হিসাব করে বলেছেন কত আয়ে কত টাকা পর্যন্ত কর দিতে হতে পারে। এই বলার মধ্যেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে শতাংশের হিসাবের থেকে টাকার অঙ্ক বোঝা অনেক বেশি সহজ। সেই সহজ পথই বেছেছেন নির্মলা। আর সব মিলিয়ে মোদীর তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে আগাম লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement