প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
পরিকাঠামো তৈরিতে পশ্চিমবঙ্গকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পে খরচ করছে জানতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে নবান্নকে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
অভিযোগ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গে জবকার্ডধারীদের তালিকায় এমন অনেকের নাম ছিল, যাঁদের তাতে টাকা পাওয়ারই কথা নয়। সঙ্গে ছিল ভুয়ো নাম তালিকায় ঢুকিয়ে একশো দিনের কাজের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও।
একই রকম অনিয়মের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় অনেক দিন টাকা দেওয়া বন্ধ ছিল। তার পরে কেন্দ্র ফের টাকা দিয়েছে। কিন্তু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে যে, গ্রামসভায় অনুমোদন করিয়ে সেই টাকা খরচ করতে হবে।
এ ভাবেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কোথাও অনিয়মের অভিযোগে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা বন্ধ করে, তো কোথাও অর্থের অপব্যবহার বন্ধ করে মোদী সরকার চলতি আর্থিক বছরে বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় করতে চলেছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধুমাত্র এক খাতের টাকা
অন্য খাতে খরচ বন্ধ করেই কেন্দ্রের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে চলেছে। কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যকে টাকা পাঠানোর আগে বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের হাতে থাকা অর্থ আগে খরচ করতে বলা হয়েছে। তার ফলেও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়নি। আর কোথায় কোথায় কী ভাবে মোদী সরকার অর্থের অপচয় বন্ধ করেছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে বাজেট পেশ করলে তার পুরো ছবি সম্ভবত উঠে আসবে।
একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় বন্ধ করা নিয়ে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, কোভিড-লকডাউনের জেরে পরিযায়ী শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফেরায় একশো দিনের কাজের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু শহরে অর্থনৈতিক কাজকর্ম চালু হওয়ার পরেও একশো দিনের কাজের চাহিদা না কমায় তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রক ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক খোঁজ শুরু করে। তখনই দেখা যায়, বহু রাজ্যে অনিয়ম হচ্ছে। জবকার্ডধারীদের ভুয়ো তালিকা তৈরি করে দুর্নীতি হচ্ছে। কেন্দ্রের এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘শুধু পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধীশাসিত রাজ্য নয়, অনেক বিজেপিশাসিত রাজ্যেও অনিয়ম ধরা পড়েছে। সেখানেও অর্থের অপচয় আটকানো হয়েছে।’’
এক খাতে দেওয়া টাকা রাজ্য যাতে অন্য খাতে খরচ করতে না পারে, তার জন্য ‘সিঙ্গল নোডাল এজেন্সি’ ব্যবস্থা তৈরি করেও সাফল্য মিলেছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, যে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যগুলিকে টাকা দেওয়া হয়, সেখানে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য রাজ্যে একটি আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পে যে টাকা দেবে, তা ওই আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই যাবে। ফলে কেন্দ্রের পক্ষে নজরদারি করা সুবিধাজনক হয়ে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর ফলেই পরিকাঠামো তৈরিতে দেওয়া ঋণ লক্ষ্মীর ভান্ডারে খরচ হলে তা সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাচ্ছে।’’