অগ্নিবীর অমৃতপাল সিংহ।
সীমান্তে কর্তব্যরত এক সেনা জওয়ানের মৃত্যুর পরও তাঁকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেয়নি সেনাবাহিনী। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীরের রাজৌরি সেক্টর থেকে পঞ্জাবে ওই জওয়ানের বাড়িতে তাঁর দেহ পাঠানো হয়েছে অতি সাধারণ বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে। সেনাবাহিনীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানিয়ে দিয়েছে, তারা যা করেছে সেনাবাহিনীর রীতি মেনেই করেছে। এই ঘটনা এবং তার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ওই জওয়ানের নাম অমৃতপাল সিংহ। তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অগ্নিবীর’। গত বছরই সেনাবাহিনীতে ‘অগ্নিপথ প্রকল্প’-এর ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রকল্প অনুযায়ী বাহিনীতে যোগ দেবেন যাঁরা, তাঁরাই অগ্নিবীর। তবে এই অগ্নিবীরদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয় কেবল চার বছরের জন্য। মেয়াদ শেষে নিয়মিত পেনশনও পান না তাঁরা। বদলে তাঁদের দেওয়া হয় এককালীন ১১.৭১ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচিত হয়েছিল কেন্দ্র। তার পরও গত বছর সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্প চালু হয়। সম্প্রতি সেই প্রকল্পেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এক ‘অগ্নিবীর’কে ‘গার্ড অফ অনার’ না দেওয়ায় নতুন করে বিতর্ক বাড়ল। ওই জওয়ানের পরিবার জানতে চেয়েছেন, ‘অগ্নিবীর’ বলেই কি তরুণ ওই জওয়ানের দেশসেবার মূল্য নেই কোনও? ন্যূনতম সম্মানটুকুও তাঁকে দেওয়া হবে না?
এই নিয়েই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন পঞ্জাবের শাসকদল আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কেন্দ্রের কাছে জোরালো দাবি জানাব। আর কেন্দ্র যা-ই সিদ্ধান্ত নিক, পঞ্জাব সরকার এই শহিদের পরিবারের পাশে থাকবে এবং তাদের ১ কোটি টাকার অর্থসাহায্য করবে।’’ কেন্দ্রকে আক্রমণ করে পঞ্জাবের কংগ্রেস এবং শিরোমণি অকালী দলের সদস্য তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউরও। কউর বলেন, ‘‘একজন সেনা জওয়ানকে মৃত্যুর পরও ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়নি জেনে আমি বিস্মিত।’’
পুঞ্চ সেক্টরে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর রাইফেলে কাজ করতেন অমৃতপাল। গত শুক্রবার পঞ্জাবের মানসা গ্রামে শেষকৃত্য হয় তাঁর। তার পর থেকেই বিতর্কের শুরু। এর পরেই শনিবার সন্ধ্যায় ওই ‘অগ্নিবীর’-এর মৃত্যুর কথা জানিয়ে একটি ব্যাখ্যা দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কর্পস।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্টে তারা লেখে, গত ১১ অক্টোবর রাজৌরি সেক্টরে পাহারায় থাকাকালীন মৃত্যু হয় ‘অগ্নিবীর’ অমৃতপালের। তবে সেনা এ-ও জানায় যে, অমৃতপালের মৃত্যু হয়েছে নিজেরই ছোড়া গুলিতে জখম হয়ে। সাধারণত নিজের গুলিতে মৃত্যু হওয়া সেনাকর্মীদের ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়ার রীতি নেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। তাই তারা রীতি মsনেই সেই কাজ করেছে।
ওই পোস্টের পর পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মান অবশ্য জানিয়েছেন, কেন্দ্র বা ভারতীয় সেনা অমৃতপালকে শহিদ ভাবুক বা না ভাবুক, পঞ্জাব তাকে শহিদের মর্যাদাই দেবে।