প্রতীকী ছবি।
গোটা বিশ্বে মোট জনসংখ্যার নিরিখে এখনও শীর্ষে চিন। সামান্য পিছনেই রয়েছে ভারত। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, আগামী বছরের মধ্যেই চিনকে অতিক্রম করে যাবে আমাদের দেশ।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরে ভারত ও চিনের জনসংখ্যা যথাক্রমে ১৪১.২ কোটি এবং ১৪২.৬ কোটি। এই ব্যবধান মুছে যাবে আর বছরখানেকের মধ্যেই। ২০৫০ সালে চিনের সম্ভাব্য জনসংখ্যা হবে ১৩১ কোটিরও বেশি। ওই সময়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ভারত (সম্ভাব্য জনসংখ্যা ১৬৬ কোটিরও বেশি)।
আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে জনসংখ্যা সম্পর্কিত এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর গোটা বিশ্বের জনসংখ্যা পেরোতে চলেছে ৮০০ কোটির গণ্ডি। ২০৩০ সালে তা ৮৫০ কোটি, ২০৫০-এ ৯৭০ কোটি এবং ২১০০ সালে বিশ্বের সম্ভাব্য জনসংখ্যা হতে চলেছে ১০৪০ কোটিরও বেশি!
রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুই জনবহুল অঞ্চল হল পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া। এই দুই অঞ্চলের মধ্যেই পড়ছে ভারত এবং চিন। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বর্তমানে জনসংখ্যা ২৩০ কোটি (বিশ্বের ২৯ শতাংশ)। অন্য দিকে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ২১০ কোটি জনসংখ্যা (বিশ্বের নিরিখে ২৬ শতাংশ)। ২০৩৭ সালের ভিতরে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলের তকমা পেতে চলেছে বলে ওই রিপোর্টের পূর্বাভাস। কারণ ২০৩০ সাল নাগাদ পুর্ব ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ায় জনসংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করবে।
২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের যে পূর্বাভাস করা হয়েছে, তার অধিকাংশই দেখা যাবে আটটি দেশে। যার মধ্যে রয়েছে ভারত, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মিশর, ইথিয়োপিয়া, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, তানজ়ানিয়া।
রিপোর্ট জানিয়েছে, ১৯৬৫ সালের পরে মহিলা পিছু সন্তান জন্মদানের হার হ্রাস পাওয়ায় বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন বা আইএইচএমই-র পূর্বাভাস অনুযায়ী ২১০০ সালে ভারতে মহিলা পিছু সন্তান জন্মদানের হার হবে ১.২৯।
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের জনসংখ্যা পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহিলাদের (৪৯.৭ শতাংশ) তুলনায় পুরুষদের সংখ্যা (৫০.৩ শতাংশ) সামান্য বেশি। ২০৫০ সালে ওই সামান্য ব্যবধান মুছে মহিলাদের সংখ্যা কার্যত পুরুষদের সমান হবে বলেই পূর্বাভাস ওই রিপোর্টে।
১৯৫০ সালের পরে ২০২০-তে প্রথম বার বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এক শতাংশের কম ছিল। এই প্রবণতা আগামী কয়েক দশক ধরে চলবে বলে পূর্বাভাস রিপোর্টে।
এ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে অভিবাসী প্রসঙ্গও। আন্তর্জাতিক অভিবাসনের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংখ্যার বিন্যাস পরিবর্তিত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ লক্ষেরও বেশি নাগরিক নিজেদের দেশ ছেড়েছেন। এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে উপমহাদেশের কয়েকটি দেশে। মূলত কাজের সূত্রেই অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছেন অধিকাংশ। তার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান (১ কোটি ৬৫ লক্ষ), ভারত (৩৫ লক্ষ), বাংলাদেশ (২৯ লক্ষ), নেপাল (১৬ লক্ষ) এবং শ্রীলঙ্কা (১০ লক্ষ)। এ ছাড়া সিরিয়া (৪৮ লক্ষ), ভেনেজ়ুয়েলা (৪৮ লক্ষ), মায়ানমারেও (১০ লক্ষ) একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছনের সারিতে থাকা ৪৬টি দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে দ্রুত। এর মধ্যে অধিকাংশ দেশেই ২০২২ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
২০২৯ সালে বিশ্ব জুড়ে প্রত্যাশিত আয়ু ছিল ৭২.৮ বছর। তবে করোনা অতিমারির প্রভাবে ২০২১ সালে তা কমে হয়েছে ৭১ বছর। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত বিষয়ে নজর রাখা প্রয়োজন। কারণ সুস্থায়ী উন্নয়নের উপরে সরাসরি পরিবেশগত বিষয়গুলির প্রভাব রয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই রিপোর্ট সামনে আসতেই কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের টুইট, ‘‘সম্ভাব্য তারিখ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। দু’দশক আগে ২০৩৪ বলা হয়েছিল। পরে তা হয় ২৯২৬। এখন হল ২০২৩।’’ ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি আজ জানিয়েছেন, পরিবার পরিকল্পনা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রকল্প আবশ্যিক ভাবে কার্যকর করা উচিত। এর পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, তবে দেখতে হবে জনসংখ্যার ভারসাম্য যেন নষ্ট না নয়। জনসংখ্যার স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছেন তিনি।