প্রতীকী ছবি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিসার দরজায় খিল আঁটার হুঙ্কার ছাড়লেও, আশা ছাড়েনি দিল্লি। সূত্রের খবর, সেই কারণেই কড়া শব্দে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পথে হাঁটার বদলে বরং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলার চেষ্টা করছে তারা। তবে ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার আঁচ টের পেতে শুরু করেছে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। কর্মীদের একাংশই বলছেন, এর জেরে আমেরিকা থেকে যেমন অনেকে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন, তেমনই দেশে এসে কাজের জন্য নতুন প্রজেক্ট জোগাড় করা কঠিন হবে তাঁদের পক্ষে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, করোনার জেরে বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে মার্কিন মুলুকে বেকারত্ব চরমে। তাই অন্তত এ বছর আর নতুন করে চার ধরনের ভিসা দেওয়া হবে না। এইচ-১বি, এল, এইচ-২বি এবং জে। অথচ ফি বছর যত এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হয়, তার অন্তত ৭০% থাকে ভারতীয়দের পকেটে। মূলত তার জোরেই বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্পে কর্মী পাঠায় টিসিএস, কগনিজ্যান্ট, উইপ্রোর মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। এল-১ ভিসার ভরসায় ভারত থেকে কর্মীদের বদলি করে আমেরিকায় কাজে নিয়ে যায় সে দেশের মাটিতে ব্যবসা করা বিভিন্ন সংস্থাও।
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের সংগঠন ফোরাম ফর আইটি অ্যান্ড আইটিইএস এমপ্লয়িজের কলকাতা শাখার সাধারণ সম্পাদক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, যাঁদের ভিসা শেষের মুখে, এখন তাঁদের ফেরা ছাড়া উপায় নেই। তা ছাড়া, এই টালমাটাল অর্থনীতিতে বরাত না-থাকায় এমনিতেই ওই দেশে কাজ গিয়েছে অনেকের। এখন ভিসার এই কড়াকড়ির কারণে নতুন করে কাজের চেষ্টার বদলে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যা হল, দেশে ফিরেও যে কাজ পাওয়া যাবে, তেমন প্রজেক্ট কই? বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে খরচ বাঁচাতে অন্য সব কিছুর মতো তথ্যপ্রযুক্তি বাজেটও ব্যাপক কাটছাঁট করছে অধিকাংশ সংস্থা।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের মন্তব্য লুকোল টুইটার
কিংশুক-সহ অনেকেই বলছেন, সাধারণত তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপুল টাকা ঢালে ভ্রমণ, হোটেল, বিমান পরিবহণ, খুচরো বিক্রির (রিটেল) মতো ক্ষেত্রগুলি। কিন্তু করোনার আক্রমণে এর সবগুলিই পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে। অবস্থা ভাল নয় আরও বহু ব্যবসার। তাই আপাতত খরচ বাঁচাতে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন প্রজেক্ট শিকেয় তুলে রাখছে তারা। তাই মার্কিন মুলুক থেকে যাঁরা ফিরতে বাধ্য হবেন, চট করে অন্য কোনও দেশে তাঁদের পাঠানো শক্ত। আবার এ দেশেও নতুন প্রজেক্ট বাড়ন্ত হওয়ায়, ওই কর্মীদের অনেকেরই কাজ পাওয়া কঠিন হবে। চাপ বাড়বে দেশে কাজ করা কর্মীদের উপরেও।
আরও পড়ুন: ৩ লক্ষ শিশুমৃত্যুর আশঙ্কা দেশে, বলছে ইউনিসেফ
সূত্রের খবর, এত কর্মীর রুজি-রুটি জড়িত বলেই ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে এখনও পাল্টা সুর চড়ায়নি দিল্লি। ২০১৮ সালে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, এইচ-১বি ভিসায় হাত দেওয়ার আগে যেন ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের কথা মনে রাখে আমেরিকা। দিন দশেক আগে বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, করোনার এই কঠিন সময়েও মার্কিন মুলুকে স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ভারতীয়রা যে ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, হোয়াইট হাউস যেন তা না-ভোলে। এর বাইরে হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ কিংবা আমদাবাদে ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর মতো মেগা ইভেন্ট তো আছেই।
এত কিছুর পরেও ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে তাই স্বাভাবিক ভাবেই খুশি নয় দিল্লি। সূত্রের খবর, আপাতত এ নিয়ে পাল্টা তোপ না-দেগে বরং বিষয়টি নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনায় বসতে মার্কিন প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে তারা। চিন্তা, ওই সমস্ত ভিসার ভরসায় আমেরিকায় থাকা ভারতীয় পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নিয়েও।
ভিসা-সিদ্ধান্তের বিরোধিতা অবশ্য ক্রমশ দানা বাঁধছে খাস মার্কিন মুলুকে। গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই, অ্যাপলের কর্ণধার টিম কুক, মাইক্রোসফটের শীর্ষ কর্তা সত্য নাদেল্লা থেকে শুরু করে টেসলার এলন মাস্ক— সকলেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। সস্তার দক্ষ শ্রমিক খুইয়ে ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ সে দেশের শিল্প সংস্থাগুলির একাংশ। কিন্তু আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত বা তার পরেও বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমেরিকা এই কড়াকড়িই বজায় রাখবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প।