পাক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকান। সুলতান ডাকিতে পরিস্থিতি তদারকিতে ভারতীয় সেনা। ছবি: এএফপি।
উৎসবের মরসুমেও নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি অব্যাহত। তা নিয়ে শনিবার পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়ে দিয়েছেন, সীমান্তে শক্তি পরীক্ষা করতে এলে, ভারত যথাযথ জবাব দেবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখায় রক্তপাত বন্ধ করতে গেলে হুঁশিয়ারি নয়, বরং সুষ্ঠ ভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে বলে মত জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র নেত্রী মেহবুবা মুফতির। প্রায় একই রকম বার্তা দিয়েছে হুরিয়ত কনফারেন্সও। এরই মধ্যে, শনিবার পাক হাইকমিশনের আধিকারিকদের ডেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দিল্লি। আর, ইসলামাবাদ উল্টে এই ঘটনায় নয়াদিল্লিকেই দায়ী করছে।
ভারত-পাকিস্তানকে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বার করার পরামর্শ দিয়েছেন মেহবুবা। শনিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখার দু’তরফে এমন প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভারত এবং পাকিস্তান, দু’দেশের নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক স্বার্থ ভুলে আলাপ আলোচনায় উদ্যোগী হতেন, তাহলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। বাজপেয়ীজি এবং মুশারফ সাহেব মিলে যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর এবং তার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন, সেখান থেকেই শুরু করা যেতে পারে’।
মেহবুবা একা নন, একমাত্র আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান এবং রক্তপাত বন্ধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে হুরিয়ত কনফারেন্সও। তাদের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘ভারত এবং পাকিস্তান, দু’দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ, যুদ্ধংদেহী মনোভাব ছেড়ে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসুন। শুভবুদ্ধির উদয় ঘটুক। দু’তরফেই রক্তপাত বন্ধ হোক’। দুই দেশের প্রলম্বিত সংঘাতের জেরে নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পারের নিরীহ কাশ্মীরি এবং দু’দেশের জওয়ানদের কড়া মূল্য চোকাতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করে হুরিয়ত।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক হানায় নিহত ১১, জবাব ভারতের, হত ৮ পাক সেনা
শুক্রবার বিনা প্ররোচনায় জম্মুর পুঞ্চ এবং উত্তর কাশ্মীরের গুরেজ থেকে উরি সেক্টর পর্যন্ত এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনা। তাতে চার সেনা ও এক বিএসএফ সাব ইনস্পেক্টর-সহ ১১ জন প্রাণ হারান। মৃতদের মধ্যে ৬ গ্রামবাসীও রয়েছেন। হামলার প্রত্যুত্তরে ভারত পাল্টা গুলি চালালে ৮ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীরও প্রভূত ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে তলানিতে এসে ঠেকেছে। পাক হাইকমিশনের আধিকারিকদের ডেকে এ দিন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দিল্লি। তবে বিনা প্ররোচনায় গুলিবর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। তাদের দাবি, ভারতীয় সেনাই প্রথম গুলি চালায়। তার পর পাক রেঞ্জাররা জবাব দেন।
আরও পড়ুন: ‘কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস-টু-এয়ার’ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ ভারতের
শুধু তাই নয়, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল বাবর ইফতিকারকে নিয়ে ইসলামাবাদে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত জোগাতে নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করছে ভারত। আমাদের কাছে এর সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে তা তুলে ধরব আমরা।’’