প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে কাটছাঁট করতে কয়েক বছর আগে সক্রিয় হয় মোদী সরকার। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বপ্নপূরণের’ পথে হাঁটতে গিয়ে গত ৫ বছরে অস্ত্র আমদানি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। কিন্তু একই সময়সীমার মধ্যে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানি ১৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। সুইডেনের সামরিক সমীক্ষা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগান সফল করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে কাটছাঁট করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ফলে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের তুলনায় পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগে এই ভাটার টান বলে সরকারি সূত্রের খবর। তবে এসআইপিআরআই রিপোর্ট বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশ থেকে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে শীর্ষেই রয়েছে ভারত। এসআইপিআরআই-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বের মোট অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানির ১১ শতাংশ করে ভারত। তবে মোদী সরকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘স্বদেশি উৎপাদনে’ জোর দেওয়ার ‘প্রভাব’ পড়েছে আমদানিতে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পরবর্তী সময়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতি রূপায়ণের জন্য পদক্ষেপ করা হয়।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে কাটছাঁট করতে কয়েক বছর আগে সক্রিয় হয় মোদী সরকার। বিদেশ থেকে অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি নিয়েও নতুন করে পর্যালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার পরে প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমারের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা পর্যালোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি, ২০২০ সালে এ বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করার সুপারিশ করেছিল।এর পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি (ডিএসি) তা অনুমোদন করে। তার জেরে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ভারতকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে গত বছর প্রথম ধাপে ১০১টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, ক্ষেপণাস্ত্র, কামান, ড্রোন, যুদ্ধে ব্যবহারের হালকা হেলিকপ্টার থেকে ভারী পণ্যবাহী বিমান আমদানিতে ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুধু ভারত নয়, সামগ্রিক ভাবে গত ৫ বছরে বিশ্ব জুড়ে অস্ত্র আমদানির ব্যবসা ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে বলে এসআইপিআরআই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। তবে ইউক্রেনের মতো যুদ্ধদীর্ণ দেশে তা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালের হিসাব ধরলে অস্ত্র আমদানিতে তৃতীয় স্থানে ভলোদিমির জ়েলেনস্কির দেশ! অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে ২০২১-২২-এ দ্বিতীয় স্থানে সৌদি আরব এবং তৃতীয় স্থানে কাতার রয়েছে। চিন ৫ এবং পাকিস্তান ৮ নম্বরে।
অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। বিশ্বের অস্ত্রবাজারের ৪০ শতাংশই তাদের দখলে। যদিও বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক ভারত সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে রাশিয়ার থেকে। তবে ২০১৩-১৭ সালের মধ্যে ভারতের মোট অস্ত্র আমদানিতে রাশিয়ার অবদান ৬৪ শতাংশ হলেও ২০১৮-২২-এ তা কমে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।