রাষ্ট্রপুঞ্জ। ফাইল চিত্র।
রাশিয়ার নাম না করলেও ইউক্রেনে হিংসার ধারাবাহিক নিন্দা করে চলেছে ভারত। বার বার দাবি জানানো হচ্ছে, সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপ এবং কূটনীতির পথে ফেরার। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মস্কোর নিন্দা প্রস্তাবে কখনই শামিল হচ্ছে না নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অশোধিত তেল অর্থাৎ জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর সঙ্কট বাড়বে এমনটাই আশঙ্কা। যার অর্থ, আরও বাড়বে মূল্যবৃদ্ধি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুজরাত নির্বাচনই শুধু নয়, ক্রমশ কাছে আসছে চব্বিশের লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিও। এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া বাধ্যবাধকতার কারণেও রাশিয়ার মতো পুরনো মিত্রকে চটিয়ে, সস্তায় তেল আমদানি এখনই বন্ধ করতে চায় না মোদী সরকার।
সম্প্রতি রাশিয়ার গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবি ভারত খারিজ করেছিল। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইউক্রেনের চার অঞ্চলে পুতিন সরকারের গণভোটের আয়োজনের বিরোধিতায় শামিল হল না নয়াদিল্লি। সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটিতে বিরত রইলেন ভারতের প্রতিনিধি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী আজ বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ধারাবাহিক ভাবে একই রয়েছে। তা হল, আমরা মনে করি, বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত হল রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন। রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে সর্বদা তুলে ধরা প্রয়োজন। এ ছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং প্রস্তাবের বয়ানকেও গুরুত্ব দিই আমরা।”
ভারত মুখে আন্তর্জাতিক আইন তুলে ধরার কথা বললেও, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাশিয়া প্রশ্নে বারবারই সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, প্রত্যেকটি দেশ, বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় স্বার্থের হিসাবে। ভারতও সেটাই করছে।
তবে ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ অঞ্চলকে রাশিয়ায় জুড়ে নেওয়ার উদ্যোগকে বিপুল ভাবে নাকচ করেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চ। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা নিন্দাপ্রস্তাব সমর্থন করেছে ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৪৩টি দেশ। বিপক্ষে পড়েছে মাত্র ৫টি ভোট। ভারত-সহ ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। তবে তার আগে মস্কোর তরফে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবি জানানো হলেও ভারত-সহ ১০৭টি দেশ তার বিরোধিতা করে।
ইউক্রেনের ডনেৎস্ক ও লুহানস্কের পাশাপাশি গত মাসে জ়াপোরিজিয়া ও খেরাসনের অধিকৃত অঞ্চলে গণভোট করিয়ে সেগুলিকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির ঘোষণা করেছে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। মস্কোর দাবি, ওই চারটি অঞ্চলেরই ৮০ শতাংশের বেশি অধিবাসী রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তিকরণের পক্ষে মত দিয়েছেন গণভোটে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ায় একই কায়দায় গণভোট করিয়ে দখল নেয় রাশিয়া।