নিভৃতবাসে গোটা দেশ। বিশ্বও। মুখোমুখি দেখা হওয়ার উপায় নেই। তাই দূরে থেকেও দেখা-শোনার মঞ্চ হয়েছে ভিডিয়ো কল। সেই ভিডিয়ো কলেই যেমন চলছে গল্পগাছা, তেমনই চলছে অফিসের জরুরি কাজ, মিটিং। এই গণ-ভিডিয়ো কল করতে গিয়েই জ়ুম, হাউসপার্টির মতো একাধিক অ্যাপে ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্বজুড়ে।
ভিডিয়ো কল করার অ্যাপ জুম ২০১৯ সালে যত ডাউনলোড হয়েছিল, ২০২০-র প্রথম দু’মাসেই তার থেকে বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এই চাহিদার কারণ একমাত্র জ়ুমেই একটি ভিডিয়ো কলে যোগ দিতে পারেন ১০ জনের বেশি। ৫০ জন পর্যন্ত একসঙ্গে ভিডিয়ো কলে আলোচনা করতে পারেন। তাই দেশ তথা বিশ্বজুড়েই অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে অফিসের জরুরি মিটিংয়ে ব্যবহার হচ্ছে জ়ুম।
খোদ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জ়ুম অ্যাপে ক্যাবিনেট বৈঠক করার ছবি পোস্ট করেন গত সপ্তাহে। এ দেশেও দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রকের সাংবাদিক বৈঠকে, কংগ্রেসের সাংবাদিক বৈঠকে এই অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু টুইটারে একাধিক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, গ্রুপ ভিডিয়ো কল থেকে যোগদানকারী সকলের ই-মেল আইডি, ব্যক্তিগত কথোপকথনের মতো বিষয়ও অনেকের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও জ়ুম থেকে ফেসবুকে ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই অ্যাপে যে হ্যাকারেরাও সহজে হানা দিতে পারে তাও সম্প্রতি নানা ঘটনায় দেখা গিয়েছে। জ়ুমে অনলাইন ক্লাস চলাকালীন হ্যাকারেরা সেখানে অন্য ভিডিয়ো চালিয়ে ‘জ়ুমবম্বিং’ করে তা ভেস্তে দিয়েছে। নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল তথ্য সুরক্ষা নিয়ে জানতে চেয়ে জ়ুমকে চিঠিও দিয়েছেন। জ়ুমের সিইও এরিক ইউয়ান অবশ্য নিজের ব্লগে দাবি করেছেন, গ্রাহকদের তথ্য ও সুরক্ষাকে তাঁরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। জ়ুমের আরও দাবি, বিশ্বজুড়ে দু’হাজারেরও বেশি সংস্থা সব সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে এই অ্যাপ ব্যবহার করছেন।
তবে সুরক্ষা বর্মে যে ছিদ্র রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে বৃহস্পতিবার। মুম্বইয়ে জ়ুমের মাধ্যমে ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন তার মধ্যে ঢুকে পড়ে তা ভেস্তে দেয় হ্যাকাররা। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যত দিন যাবে এই ধরনের প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। তাই প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে তথ্য-সুরক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ আমজনতার প্রতি তাঁর পরামর্শ, চেষ্টা করতে হবে যত কম সম্ভব ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, এই পরিসরে না আনা। বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
বিশেষত যখন, বন্ধু-পরিজনদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে গল্প করার অ্যাপ, হাউসপার্টিও এই প্রয়োজন মেটাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে। সমাজমাধ্যমে একাধিক সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, এই অ্যাপেও গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য রয়ে যায়, যা পরে অন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের পরামর্শ, ‘‘একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ভিডিয়ো কল না করে ফোন করা যেতে পারে। আমরা যদি এই সময় আমাদের চাহিদাগুলোর সঙ্গে একটু আপস করি তাহলেই ভাল। এই কঠিন সময় এক দিন কেটে যাবে। কিন্তু এই সময়কে মোকাবিলা করার যে শিক্ষা আমরা পেলাম তা থেকে যাবে।’’