ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি এএফপি।
ঠিক এক বছর আগে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন তখন পুরোদমে চলছে। সেইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক যুদ্ধ তুঙ্গে। দু’দিন আগেই হিউস্টনে ‘হাওডি মোদী’ সেরে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কে ফিরেছেন। প্রবল মোদী-প্রেমের সেই প্রদর্শনীর পরেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয় বার মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন নয়াদিল্লিকে।
এমনই এক দোলাচলের ক্ষণে, সফররত ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক খোলামেলা নৈশাহার আড্ডায় বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেছিলেন, “ট্রাম্প কিছু বললেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি! সে তিনি আমাদের প্রশ্ংসাই করুন বা সমালোচনা। আসল কথা হল, তিনি যত কম মুখ খোলেন, ততই কূটনৈতিক ভাবে আমাদের পক্ষে ভাল!” এক বাঙালি কূটনীতিক রসিকতার ছলে বলেছিলেন, “তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি!”
এক বছর পরে আজও সেই রাতের কথোপকথনের সারবত্তা থেকে সরে আসার কোনও কারণ দেখছে না সাউথ ব্লক। মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে ট্রাম্পের ভারত সম্পর্কিত টিপ্পনি হজম করতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে দিল্লির। চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতকে একই বন্ধনীতে ফেলে ট্রাম্প গত কাল বলেছেন, করোনায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানাচ্ছে না ভারত। স্তম্ভিত সাউথ ব্লক। না-পারছে এমন মন্তব্য হজম করতে, না পারছে পাল্টা কোনও প্রতিক্রিয়া উগরে দিতে। প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে এখনও পর্যন্ত বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ সর্বোচ্চ, বাড়ল সংক্রমণের হারও
কূটনীতিকদের মতে, করোনাভাইরাসের তথ্য গোপন করার জন্য ভারতের কাছেই চিনের উপর চাপ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ব্যাপারে ভারতের উপর তাঁর আস্থার কথাও জানিয়েছিলেন। আবার সেই ট্রাম্পই মাথা গরম করে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবারহ না-করলে প্রত্যাঘাত করার মতো যুদ্ধবাজ শব্দ ব্যবহার করতে দ্বিধা করেননি। এর আগে হার্লে ডেভিডসন মোটরবাইকের শুল্ক ছাড়-সংক্রান্ত মন্তব্য থেকে শুরু করে মোদীর জন্য ভাল পাত্রী খোঁজা নিয়ে ঠাট্টা, অথবা মোদীর ইংরেজি বলার ভঙ্গি নকল করে দেখানো— সব ক্ষেত্রেই মোদী সম্পর্কে ট্রাম্পের তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে। আবার সেই ট্রাম্পই বলেছেন, “মোদী আমার ভাল বন্ধু।” ঠাট্টার স্বরে কূটনীতিকরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে মোদী সরকারের অবস্থা, ট্রাম্প রাখি না কুল রাখি!
আরও পড়ুন: সুখবর কি সামনের বছরে? আশা বাড়ছে
ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক সাউথ ব্লকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া, ইরান বা চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া ঠিক রেখে আমেরিকার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে কালঘাম ছোটে সাউথ ব্লকের। অথচ সে দেশেরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খামখেয়ালি আচরণের কোনও থই পাওয়া গেল না এত দিনেও! যাঁকে কূটনৈতিক বন্দনা করতে গিয়ে ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর মতো বিপুল যজ্ঞ হল এবং সেই অনুষ্ঠান করতে গিয়েই দেশে করোনার অনুপ্রবেশ ঘটতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে— এখন সেই ট্রাম্পই ভারতের দিকে আঙুল তুলছেন! অভিযোগ আনছেন করোনা তথ্য গোপনের! কার্যত রাহুল গাঁধী সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন, তাতেই হাওয়া দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট— এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির লোকজনেরা।