নরেন্দ্র মোদী এবং গোটাবায়া রাজাপক্ষে। ফাইল চিত্র।
বছর দেড়েক আগে শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে যাওয়ার পরেই সে দেশের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন মাত্রা আনতে তৎপর হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। উদ্দেশ্য ছিল ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তির মোকাবিলা। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এল সেই প্রচেষ্টায়। বেজিংয়ের চাপ এড়িয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে ৭০ কোটি ডলারের (প্রায় ৫,২০০ কোটি টাকা) বন্দর চুক্তি করল কলম্বো।
বৃহস্পতিবার ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার সরকারি সংস্থা ‘শ্রীলঙ্কা পোর্ট অথরিটি’-র চুক্তি সই হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের এই পদক্ষেপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, চলতি বছরের গোড়ায় কলম্বো বন্দরের পূর্ব প্রান্তে একটি টার্মিনাল গড়ার জন্য আদানি গোষ্ঠী এবং জাপানের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল দুই রাজাপক্ষে ভাইয়ের সরকার।
বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেই ২০১৯-এর ডিসেম্বরে ভারত সফরে এসে চিনের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ভারসাম্যের পথে হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গোটাবায়া। কলম্বোয় চিনা বন্দর তৈরির কাজ অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। গোটাবায়ার দাদা মাহিন্দা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন শ্রীলঙ্কা দ্রুত চিনের কাছাকাছি যেতে শুরু করেছিল। কলম্বোয় চিনা উদ্যোগে পোর্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে ভারতের আপত্তিকে পাত্তাই দেননি রাজাপাক্ষে। হাম্বনটোটা বন্দর চিনের হাতে তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন তিনি। এমনকী, ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০১৪ সালে সেখানে চিনা ডুবোজাহাজের যাতায়াতের খবরও উঠে এসেছিল।
কিন্তু ২০১৫ সালে মৈত্রিপালা সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরই ৫০ কোটি ডলারের (প্রায় ৩,৭০৮ কোটি টাকা) কলম্বো বন্দর চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। চিনা সংস্থাকে বিনামূল্যে ৯৯ বছরের জন্য জমি লিজ দেওয়ার প্রস্তাবও খারিজ করেন সিরিসেনা। কিন্তু ২০১৯-এর নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হয়ে গোটাবায়া ফের চিনা লগ্নির পথ প্রশস্ত করেছিলেন। এই আবহে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে কলম্বোর বন্দর চুক্তি দু’দেশের সহযোগিতার নতুন রাস্তা খুলে দিল বলেই মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।