প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।—ছবি পিটিআই।
পরিবর্তিত হল রাজনাথ সিংহের লেহ সফরের সূচি। আগামিকাল শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সফরে যাওয়ার কথা ছিল সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নরবণের। সেই সফরসূচি পরিবর্তন করা হয়েছে বলে প্রতিরক্ষামন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিকের সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে পরিবর্তিত সূচি অর্থাৎ কবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেহ সফরে যাবেন, তা জানানো হয়নি। কী কারণে সফরসূচিতে বদল, তাও জানা যায়নি।
আগামিকাল সীমান্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে লাদাখের লে সেনাঘাঁটিতে যাওয়ার কথা ছিল রাজনাথ ও সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। মূলত সীমান্ত পরিস্থিতি ও সেনা প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতেই যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সূত্রের মতে, কিছু ফরওয়ার্ড পোস্টেও যাওয়ার কথা ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। ১৫ জুনের রাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া সেনাদের সঙ্গেও কথা বলার সম্ভাবনা ছিল।
গত দেড় মাস ধরে উত্তপ্ত রয়েছে পূর্ব লাদাখ সীমান্ত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চিন সেনার অনুপ্রবেশ, কাঠামো নির্মাণ এবং দু’দেশের সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। গত এক মাসে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হলেও সীমান্তে উত্তেজনা কমেনি। পরিবর্তে সেনা ও অস্ত্র সমাবেশ নিত্যদিন বাড়িয়ে চলেছে দু’দেশই। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর লাদাখ যাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা দানা বাঁধার পরে এটিই হত রাজনাথের প্রথম লাদাখ সফর। সূত্রের খবর, চিন সেনার অনুপ্রবেশ যে দিল্লি ভাল ভাবে নিচ্ছে না এবং সীমান্ত প্রশ্নে যে কোনও আপস করা হবে না, এই বার্তা দিতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে লাদাখ সীমান্তে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে ভারত যে কোনও ভাবেই সমঝোতার রাস্তায় হাঁটছে না, সেই বার্তাও দেওয়া যেত।
বাস্তব সত্য হল, এই মুহূর্তে ভারত যে অবস্থানে রয়েছে, তাতে ছকের বাইরে গিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা অসম্ভব। পূর্ব লাদাখের হৃত জমি ফিরে পেতে যুদ্ধে যাওয়া আদৌ কাম্য নয় মোদী সরকারের কাছে। বৈঠকের মাধ্যমেই সমাধানসূত্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে। কিন্তু চিন যে নিজেদের অবস্থানে অনড়, তা তারা গত কালের তৃতীয় সামরিক বৈঠকে ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে। ২২ জুনের মতোই গত কালও পূর্ব লাদাখের চুসুল সীমান্তে সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক চলে ১১ ঘণ্টারও বেশি। কিন্তু নিট ফল শূন্য।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে গুলি-যুদ্ধের মধ্যে নাতিকে বাঁচিয়ে নিহত দাদু
এই মুহূর্তে গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার চার থেকে আট পর্যন্ত চিন সেনার দখলে। ওই এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে সেনা পরিকাঠামো। অধিকৃত এলাকাগুলি থেকে যে তাদের সরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই, তা কাল স্পষ্ট করে দিয়েছে চিন। উল্টে সীমান্তে উত্তেজনার জন্য ভারতকে দায়ী করে লাদাখে সেনা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আজ ভারতীয় সেনা সূত্রে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, গত কালের বৈঠকে দু’পক্ষেই উত্তেজনা কমানোর দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয়। পারস্পরিক ভাবে স্বীকৃত সমাধানসূত্রে পৌঁছতে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও কিছু বৈঠক হবে বলেই অনুমান। সমাধানসূত্র না মিললে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে অবশ্য সেনা ও কেন্দ্র উভয়েই নীরব।
আরও পড়ুন: চিনের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক ত্রিশূল’ হামলা দিল্লির