বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই
মস্কোয় আগামিকাল ভারত ও চিনের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক থেকে অত্যাশ্চর্য সমাধান আশা করছেন না কেউই। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার উত্তাপ কমাতে এই বৈঠক একটি দিশা দেখাবে— এমনটাই আশা করছে কূটনৈতিক শিবির।
আপাতত স্থির আছে, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র দেখা হবে দু’দফায়। প্রথমে রাশিয়া, চিন ও ভারতের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক পর্যায়ের (রিক গোষ্ঠী) বৈঠক হবে (লাদাখে সংঘর্ষের পরে এই বৈঠক হয়েছিল ভিডিয়ো কনফারেন্সে)। তার পর জয়শঙ্কর ও ওয়াং ই-র আলোচনায় বসার কথা। গালওয়ানে হিংসার পর দু’জন ফোনে কথা বলেছিলেন। পরিস্থিতি ভাল তো হয়নি বরং আরও জটিল হয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায়।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, অগস্টের শেষে প্যাংগং লেকের দক্ষিণে তিনটি গিরিখাতে ভারতীয় সেনা নিজেদের ঘাঁটি গেড়েছে। ফলে চাপে পড়েছে বেজিং। ওই পদক্ষেপের ফলে অবস্থানগত ভাবে ভারত অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছেছে। এটা বেজিংয়ের অস্বস্তির কারণ। মনে করা হচ্ছে, চিনের অস্বস্তির প্রভাব পড়বে কূটনীতির দরকষাকষিতেও।
আরও পড়ুন: শীতেও সেনা লাদাখে, ভাবছে দিল্লি
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মস্কোর বিমানে চড়ার ঠিক আগেই বিদেশমন্ত্রীর একটি বই নয়াদিল্লিতে প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, দু’দেশের সীমান্ত সঙ্কটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্য ক্ষেত্রগুলিকে (বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক) এখন আর পৃথক করে দেখা চলবে না। ভারতের চিন-নীতির প্রশ্নে এটি আগের থেকে অনেকটাই সরে আসা। সীমান্ত নিয়ে মতভেদকে পৃথক করে দু’দেশের মধ্যে স্বাভাবিক আদানপ্রদান চালিয়ে যাওয়াটাই ছিল দস্তুর। যা চিনের পক্ষে বরাবরই সুবিধাজনক থেকেছে। তারা সীমান্ত সমস্যাকে ঝুলিয়ে রেখে ভারতে রফতানি বাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু লাদাখের সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মোদী সরকারের পক্ষে পুরনো রাস্তায় থাকা সম্ভব হচ্ছে না। চিনা অ্যাপ বন্ধ করে কড়া বার্তা দেওয়া হচ্ছে আবার অতিমারি আক্রান্ত বিশ্বে চিন বিরোধিতার ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জোট তৈরির চেষ্টাও করছে ভারত।
৪৫ বছর পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গত পরশু গুলি চলার পর পারস্পরিক দোষারোপ হয়েছে। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-এর পক্ষ থেকে প্রথমে কড়া হুমকি দেওয়া হলেও পরে সুর নরম করে চিনের বিদেশ মন্ত্রক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর বার্তা দেয়। আসন্ন শীতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার নিষ্ঠুর আবহাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছে বেজিং। সব মিলিয়ে জয়শঙ্কর-ওয়াং ই-র বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই। ভারত ও চিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য গোড়া থেকেই সক্রিয় রাশিয়া। মস্কোয় আগামিকালের বৈঠকের পিছনেও রাশিয়ার অদৃশ্য হাত রয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।