প্রতীকী ছবি।
চিনের সঙ্গে উত্তেজনা শুধুমাত্র লাদাখের গালওয়ান উপত্যকাতেই সীমাবদ্ধ নেই। উত্তরে সিকিম সীমান্তেও তৎপর দু’পক্ষ। মঙ্গলবার রাতে চিনের সেনাবাহিনীর একটি দল উত্তর সিকিমের নাকু লা সীমান্তে চলে এসেছিল। সন্ধে ৭টা থেকে কয়েক ঘণ্টা প্রায় দেড়শো-দু’শো চিনা সেনা জওয়ান নাকু লা’তে ঘোরাফেরা করতে থাকে। প্রস্তুত ছিলেন ভারতীয় জওয়ানেরাও। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) টপকে চিনা বাহিনী ভারতের দিকে আসেনি। ফিরে গিয়েছে আরও ভিতরে। ফলে দু’পক্ষই একে অপরের উপর নজরদারি রাখলেও সে দিন কোনও রকম উত্তেজনা তৈরি হয়নি বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।
বুধবারই কালিম্পংয়ের ২৭ নম্বর মাউন্টেন স্ট্রাইকিং ডিভিশনের সিনিয়র সেনা কমান্ডাররা কপ্টারে উত্তর ও দক্ষিণ সিকিমের প্রতিটি কৌশলগত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। সুকনার ৩৩ নম্বর কোর কমান্ডারের এলাকা থেকে কয়েক কোম্পানি সেনা উত্তর সিকিমের বিভিন্ন স্থানে বুধবারই রওনা দিয়েছে। দক্ষিণ সিকিমেও সেনা সমাবেশ বাড়ানো হচ্ছে।
সেনা সূত্রের দাবি, উত্তর সিকিমের থাঙ্গু উপত্যকা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মুগুথান। ভারতীয় সেনার এই ঘাঁটি থেকে আরও প্রায় ১০ কিমি দূরে নাকু। নাকু জনপদ থেকে আরও ৫ কিলোমিটার দূরত্বে নাকু লা চিন-ভারত সীমান্তের শেষ অংশ। দুর্গম এই অঞ্চলে ভারত এবং চিন উভয় পক্ষই নির্দিষ্ট সময় অন্তর লংরুট পেট্রলিং (এলআরপি) করে থাকে। সেই এলআরপি’র রুটিনের বাইরে হঠাৎ নাকু লা’তে মঙ্গলবার রাতে চিনা ফৌজের জমায়েত দেখে প্রস্তুতি নিয়েছিল ভারতীয় সেনা।
এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তার কথায়, ‘‘উত্তর ও দক্ষিণ সিকিমের গিরিপথগুলিতে এমন ঘটনা বছরভর চলতে থাকে। উভয়পক্ষই নজরদারি পেট্রলিং চালায়। কখনও কখনও দু’পক্ষ সামনাসামনি এলে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে এখনকার পরিস্থিতিতে সীমান্তে ফৌজ আনা উত্তেজনা তৈরি করতে বাধ্য।’’
সেনা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সিকিমের উত্তরে চিন সীমান্তে ছোরটেন নিমা লা, নাকু লা এবং কঙ্গরা লা এই তিনটি গিরিপথ রয়েছে। দক্ষিণ সিকিমে রয়েছে চো লা, জেলেপ লা, নাথু লা, ডোংচু লা এবং বাতান লা। প্রতিটি গিরিপথের দু’পাশে পাহাড়ের চূড়া বরাবর দখলদারি কায়েম নিয়ে দুই দেশের সেনার মধ্যে বিবাদ রয়েছে। নাথু লা এবং চো লা’তে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনাও অতীতে হয়েছে। গত ৯-১০ জুনও প্রায় দু’শো বিভিন্ন ধরনের সামরিক গাড়ি নিয়ে চিনের বাহিনী নাথু লা-র আশপাশে এসেছিল। তার পর নিজেরাই ফেরত যায়। সেনা কর্তাদের ধারণা, গাড়ি-সরঞ্জাম-অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একেবারে সীমান্তে পৌঁছাতে কত সময় লাগছে তা দেখে নিতেও চিন সেনা এমন ‘ড্রিল’ করে থাকতে পারে। তবে ২০১৭সালে ডোকলামের অচলাবস্থা কাটার পর এখনও পর্যন্ত সেখানে কোনও ফৌজি কার্যকলাপ নেই বলেই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।