—ফাইল চিত্র।
পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সমস্যা মেটাতে ফের বৈঠকে বসল ভারত-চিন। আজকের মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠকটি হয় দৌলতবাগ ওল্ডি এলাকায়। অনেক রাত বৈঠক চলেছে। অন্য দিকে লাদাখ সঙ্কট সামাল দিতে না পারার জন্য আঙুল উঠতে শুরু করেছে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়তের দিকে। প্রশ্নের মুখে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ভূমিকাও। অভিযোগ, চিন সেনার অনুপ্রবেশের খবর থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সঠিক ভাবে বুঝতে না পারার কারণে ভারত কয়েকশো বর্গ কিলোমিটার জমি চিনের কাছে হারাতে চলেছে।
লাদাখ সীমান্তে সেনা সরানোর ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে ভারত ও চিনের। গত রবিবার পঞ্চম দফা বৈঠকে বসেছিলেন দু’দেশের কোর কমান্ডারেরা। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। উল্টে বেজিং একতরফা জানিয়ে দেয়, লাদাখে সেনা প্রত্যাহার সাঙ্গ করে ফেলেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে আজ দৌলত বেগ ওল্ডির কাছে দু’দেশের মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক বসে। প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার এলাকা, গালওয়ান উপত্যকা ছাড়াও ডেপসাং এলাকায় সেনা সমাবেশ করেছে চিন। তাদের লক্ষ্য, দৌলতবেগ ওল্ডি সড়কের উপরে নজর রাখা। এই আবহেই আজ ফের বৈঠক হয়।
কিন্তু ঘরের মাটিতে যত সময় গড়াচ্ছে, তত বেশি করে আঙুল উঠছে বিপিন রাওয়তের দিকে। সরকারের একটি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও রাওয়তের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন। তবে সে কথা বাইরে আসতে দিতে নারাজ সাউথ ব্লক। সূত্রের মতে, গত এপ্রিল মাসেই উপগ্রহচিত্রে চিন সেনার গতিবিধি লক্ষ করা গিয়েছিল। অনুপ্রবেশ নিয়ে গোয়েন্দা তথ্যও জমা পড়ে। অতীতে এ ধরনের অনুপ্রবেশের চেষ্টা হলেই ভারতীয় সেনার রিজার্ভ বিগ্রেডকে দ্রুত মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযোগ, এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে সেনা মোতায়েন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে কার্গিলের মতো এ ক্ষেত্রেও বিনা বাধায় ঢুকে আসে চিন সেনা। অভিযোগ, সেনা না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে ছিলেন রাওয়ত ও ডোভাল। অভিযোগ এও যে, অনুপ্রবেশজনিত তথ্য ক্রমাগত পাওয়া সত্ত্বেও হাত গুটিয়ে ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: নিজের জীবন দিয়ে অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন বায়ুসেনার পদকপ্রাপ্ত পাইলট
পরিস্থিতি যে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে তা প্রথম বোঝা যায়, ৫ মে। যখন ভারতীয় সেনার একটি টহলদার বাহিনীকে গালওয়ান উপত্যকায় ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টের কাছে প্রবল মারধর করে চিন সেনা। একই সঙ্গে অনুপ্রবেশের খবর আসে হট স্প্রিং সেক্টর ও ডেপসাং থেকে। লাদাখের পাশাপাশি সিকিমের নাকু-লা এলাকাতেও অনুপ্রবেশ করে চিন। বিরোধীদের অভিযোগ, সে সময়েও সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে চিনকে সরকারি ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষান্ত থাকে নয়াদিল্লি।
৯ মে ফের চিন সেনা নাকু-লায় সীমান্ত অতিক্রম করে। সূত্রের মতে, সে সময়েও বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন রাওয়ত। প্রাক্তন সেনা কর্তাদের মতে, পরিস্থিতি বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন রাওয়াত। ১২ মে প্যাংগং লেকের কাছে ভারতীয় এলাকায় উড়তে থাকা চপারকে পাল্টা আক্রমণ করে দু’টি চিনা চপার। ভারতীয় চপারে জেনারেল পর্যায়ের এক জন অফিসার ছিলেন। শেষে ১৭-১৮ মে মাসে ফের চিন সেনার কাছে প্রায় ৭২ জন ভারতীয় সেনা বেধড়ক মার খেলে টনক নড়ে প্রতিরক্ষা কর্তাদের। শুরু হয় অতিরিক্ত সেনা পাঠানো। ২৪ মে লাদাখ সীমান্তের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান সেনাপ্রধান। বিরোধীদের অভিযোগ, মূলত রাওয়ত ও ডোভালের ভুল পর্যবেক্ষণের পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ভারত হারাতে বসেছে কয়েকশো বর্গ কিলোমিটার জমি। সব ধরনের জরুরি পরিস্থিতির জন্য এখন সেনাকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে।
আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত দুই যাত্রীর কোভিড পজিটিভ, নিভৃতবাসে যেতে বলা হল উদ্ধারকারীদের
আপাতত গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে সামনে আসতে দিতে রাজি নয় কেন্দ্র। কারণ এ ধরনের বিষয় সামনে এলে এক দিকে সেনার মনোবল ভেঙে পড়বে, অন্য দিকে বিরোধীরা সরব হওয়ার সুযোগ পাবেন। সেই কারণে চিনের অনুপ্রবেশ ও ঘাঁটি গড়ার নথি সামনে আসতেই তা গায়েব হয়ে গিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে। যা নিয়ে আজ ফের সরব হয়েছেন রাহুল গাঁধী। তিনি বলেন, যখনই দেশে বিজয় মাল্য, রাফাল, নীরব মোদী বা মেহুল চোক্সীর মতো ঘটনা ঘটেছে ফাইল গায়েব হয়ে গিয়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হল চিনের অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত ফাইল।