India-China Border Conflict

লাদাখে ‘দখলদারি বৈধ’ করতে নয়া কৌশল চিনের, দখল করা ভারতের জমি ছাড়তে নারাজ

বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, ২০০৫ সালে ভারত–চিন সীমান্ত সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিতে বলা ছিল, এক বার থিতু হয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীকে সরাতে পারবে না কোনও পক্ষই।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪৪
Share:

তাওয়াং-কে অস্থির করে চিন সামগ্রিকভাবে সীমান্ত-আলোচনা শুরু করানোর জন্য ভারতের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে। প্রতীকী ছবি।

তাওয়াংয়ে হামলা চালিয়ে ভারতের পাশাপাশি দলাই লামাকেও বার্তা দিতে চাইছে বেজিং। সেই সঙ্গে, তাওয়াং-কে অস্থির করে চিন সামগ্রিকভাবে সীমান্ত-আলোচনা শুরু করানোর জন্য ভারতের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে। দিল্লির কূটনৈতিক শি্বিরের বক্তব্য, সীমান্তের পশ্চিম সেক্টরে (লাদাখ) চিনা সেনার ভারতীয় জমি দখলকে নতুন স্থিতাবস্থা বা ‘নিউ নর্মাল’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে বেজিং। তাদের কৌশল, এই অবস্থাতেই যদি ভারতের সঙ্গে আগের মতো সীমান্ত-আলোচনা শুরু করে দেওয়া যায়, তাদের কব্জা করে রাখা ভারতের হাজার দুয়েক কিলোমিটার এলাকায় তারা ক্রমশ বৈধতা পে্য়ে যাবে। ঘরোয়া ভাবে এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেজিং-এর এই ফাঁদে পা দিতে নারাজ সাউথ ব্লক। সদ্য প্রাক্তন চিনা রাষ্ট্রদূত সুং উইদং অক্টোবর মাসে তাঁর বিদায়ী ভাষণে গোগরা হট স্প্রিং এলাকা থেকে সেনার পিছু হঠাকে (গত সেপ্টেম্বরে) বড় করে দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতি’ থেকে ভারত–চিন সীমান্ত এখন ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’তে ফিরেছে। দৌলতবেগ ওল্ডি-সহ বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যে চিনা সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে, সুকৌশলে তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন উইদং। কিন্তু বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সে সময় বলেন, গোগরা হট স্প্রিং এলাকা থেকে সেনা সরার বিষয়টি একটি সমস্যার সমাধান মাত্র। আরও সমস্যা রয়েছে। পশ্চিম সেক্টর অর্থাৎ লাদাখে যে সমস্যা আদৌ মেটেনি, তা বার বার চিনকে বলেছে ভারত, আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি তুলেছে। চুশুল মল্ডো সীমান্তে ২০ ডিসেম্বর ভারত-চিন কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের (পশ্চিম ফ্রন্ট নিয়ে) যৌথ বিবৃতি আজ প্রকাশ হয়েছে। সেখানেও সীমান্তে শান্তি ফেরাতে ‘বকেয়া সমস্যার’ কথা একাধিকবার উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ দিল্লির মতে, চিনকে চাপ দিয়ে অন্তত এটা যৌথ বিবৃতিতে রাখা গিয়েছে যে লাদাখ সেক্টরে এখনও সমস্যা (চিনা সেনার অনুপ্রবেশ ও ঘাঁটি গেড়ে থাকা) বিদ্যমান।

বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, ২০০৫ সালে ভারত–চিন সীমান্ত সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিতে বলা ছিল, এক বার থিতু হয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীকে সরাতে পারবে না কোনও পক্ষই। নয়াদিল্লি মনে করে, ভুটানে চিনের গ্রাম তৈরি করা, অরুণাচলে নতুন নতুন জায়গাকে চিনা নাম দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলি বেজিং করছে চুক্তির ওই ধারাটিকে মাথায় রেখেই। একইভাবে ডেপসাং বা দৌলতবেগ ওল্ডিতেও চিনা সেনা বসবাস শুরু হয়ে গেলে, তাকে ২০০৫-এর চুক্তির ফাঁদে ফেলতে পারবে চিন।

Advertisement

কিন্তু পশ্চিম সেক্টরে ‘নতুন স্থিতাবস্থা’ কায়েম করতে কেন পূর্ব সেক্টরে তাওয়াং হামলা? বিদেশ মন্ত্রক বলছে কারণ একাধিক। প্রথমত, পূর্ব সেক্টরে তাওয়াংকে অস্থির করলে ভারতের উপর চাপ বাড়বে, বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ে (দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের) বৈঠক (যা ২০২০ সাল থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে) শুরু করার জন্য। সে ক্ষেত্রে ক্রমশ পশ্চিম সেক্টরে চিনের দখল করা জমির উপর বেজিংয়ের ক্রমশ সিলমোহর পাকা হবে। দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক ভাবে তাওয়াংয়ের উপর বেজিং-এর নজর রয়েছে। এটি ষষ্ঠ দলাই লামার জন্মস্থান। পঞ্চম দলাই লামার নির্দেশে এখানে বৌদ্ধ মঠ গড়া হয়েছিল। তাওয়াং দিয়ে বর্তমান দলাই লামা ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাওয়াংকে নিজেদের অংশ বলে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছে বেজিং। বর্তমান দলাই লামার সঙ্গেও তাদের দ্বন্দ্ব বহু দিনের। তাই তাওয়াংয়ের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় হামলা চালিয়ে তারা বার্তা দিতে চায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement