লাদাখে ভারতীয় সেনার কর্মকাণ্ড। —ফাইল চিত্র
পূর্ব লাদাখ সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা মোতায়েন ঘিরে উত্তেজনা কমাতে ভারত-চিন সামরিক পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে গতকাল। সেই বৈঠক নিয়ে মুখ খুলল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের তরফে আজ রবিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে’ পরিস্থিতির সমাধান চায় দুই দেশই। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই বৈঠক হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশমন্ত্রকের এই বিবৃতির পর কূটনৈতিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, লাদাখ নিয়ে ধীরে ধীরে নমনীয় অবস্থান নিচ্ছে দুই দেশই।
মে মাসের শুরুর দিক থেকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তের প্যাংগং লেক এলাকায় দু’দেশের সেনা মোতায়েন ঘিরে ভারত-চিন সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়। টানা প্রায় এক মাস এই পরিস্থিতি চলার পর সামরিক পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাব দেয় ভারত। প্রস্তাবে রাজি হয় বেজিংও। সেই মতো শনিবার পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের অভ্যন্তরে মালডোতে ‘বর্ডার পার্সোনেল মিটিং পয়েন্ট’-এ শনিবার বৈঠকে বসেন দু’দেশের সেনা কর্তারা। ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন ফোর্টিন্থ কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিংহ। চিনের পক্ষে ছিলেন তিব্বত মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট-এর কমান্ডার।
সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে রবিবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক উন্নতির ভারত-চিন সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দু’দেশের প্রধানদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশই শান্তিপূর্ণ ভাবে সীমান্ত বিবাদ মেটাতে চায়।’’
আরও পড়ুন: লাদাখ সঙ্কট মিটতে সময় লাগবে: সেনা
এ বছর ভারত-চিন সম্পর্ক স্থাপনের ৭০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘যত দ্রুত সমস্যা মিটবে, তত তাড়াতাড়ি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে সহমত হয়েছে উভয় পক্ষ।’’ চিনের সঙ্গে সীমান্ত-বিবাদ মেটাতে ভারত কূটনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে বিদেশমন্ত্রক।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত প্রায় ১০ হাজার, মোট আক্রান্তে স্পেনকে টপকে বিশ্বে পাঁচ নম্বরে ভারত
লাদাখ, সিকিম ও অরুণাচলে ভারত-চিন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারণ নিয়ে বেজিং-নয়াদিল্লি বিবাদ দীর্ঘদিনের। তার মধ্যেই পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেক এলাকায় প্রকৃত নিয়্ন্ত্রণরেখায় গত ৫ এবং ৬ মে দু’দেশের সেনা জওয়ানদের মধ্যে হাতাহাতি হয় বলে খবর মেলে। তার পর থেকে ভারত ও চিন উভয় দেশেরই সেনা মোতায়েন শুরু হয়। ভারতের অভিযোগ, চিনের সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করার জেরেই বিবাদ শুরু হয়। চিনের তরফেও পাল্টা একই অভিযোগ তোলা হয়। যদিও দু’দেশই একে অন্যের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে গোড়া থেকেই।
ওই সেনা মোতায়েন ঘিরে দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। উভয় দেশই কড়া বার্তা দিতে থাকে। তবে কয়েক দিন পর থেকে দু’পক্ষই নমনীয় অবস্থান নেয়। শনিবারের সামরিক পর্যায়ের বৈঠকের পর পরিস্থিতি আরও কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।