কড়া নজর। ছবি: পিটিআই।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও চিনের সেনা মুখোমুখি হলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না-করার নীতি এত দিন মেনে চলেছে ভারত। কিন্তু লাদাখের গালওয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরেই এই নীতি বদলের প্রয়োজন নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভারত এ বার বদলে ফেলল ‘রুল অব এনগেজমেন্ট’।
নতুন নিয়মে চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনও বারণ থাকবে না সেনাবাহিনীর উপরে। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আজ সায় দিয়েছে এই নীতিতে।
গালওয়ানে সংঘাতের পরে কেটে গিয়েছে ছ’দিন। এখনও গালওয়ানে ভারতীয় ভূখণ্ডের একাংশ দখল করে বসে রয়েছে চিন সেনা। নিজেদের অবস্থান থেকে সরার কোনও লক্ষণও দেখায়নি তারা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাতের কথা মাথায় রেখে গালওয়ানে নজরদারি বাড়াচ্ছে ভারত। পাশাপাশি লাদাখ অঞ্চলে কমব্যাট পেট্রল চালু করেছে বায়ুসেনা। পাশাপাশি চিনা হামলার আশঙ্কায় সেনা মোতায়েন করা শুরু হয়েছে দারবুক-দৌলতবেগ ওল্ডি (ডিবিও) সড়ক নির্মাণের কাজে।
গত ক’দিনের মতোই আজও জম্মু-কাশ্মীরের আকাশে চক্কর কেটেছে একাধিক যুদ্ধবিমান। বায়ুসেনা সূত্রের মতে, মিরাজ, সুখোইয়ের মতো অত্যাধুনিক বিমানকে ইতিমধ্যেই ফরওয়ার্ড বেসে পাঠানো হয়েছে। লেহ-র আকাশে উড়েছে অ্যাপাচে কপ্টার। আজ বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদৌরিয়া বায়ুসেনার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে চিনের বিমান এর মধ্যে ভারতীয় বায়ুসীমায় ঢোকেনি। যে কোনও পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত বায়ুসেনা। নিহত জওয়ানদের আত্মত্যাগ বৃথা হতে দেব না।’’
আরও পড়ুন: গালওয়ান নিয়ে চিনা দাবি ওড়াল দিল্লি
গালওয়ানের ঘটনার পরে ডিবিও সড়ক নির্মাণের কাজে পাহারা দেওয়ার জন্য আরও বেশি সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নর্দার্ন কম্যান্ডের এক পদস্থ সেনা অফিসারের মতে, ওই রাস্তা তৈরি হলে কারাকোরাম পর্যন্ত পৌঁছে যাবে ভারতীয় সেনা। ওই এলাকা চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডরের খুব কাছে। ফলে ওই রাস্তা নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি রয়েছে চিনের। ওই সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য ফের হামলা চালাতে পারে তাদের সেনা। ২০১৩-য় ওই সড়ক সন্নিহিত দেসপাং এলাকায় চিনা সেনা ঢুকে তিন সপ্তাহ বসে ছিল।
ওই সড়ক প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর। ওই সব এলাকায় এক বার চিনা সেনা ঢুকে পড়লে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সরানো কঠিন হয়ে পড়বে। আটকে যাবে সড়ক নির্মাণের কাজও। তাই ডিবিও সড়কের স্পর্শকাতর এলাকা জুড়ে সেনা মোতায়েন শুরু হয়েছে।
সেনা সূত্রের মতে, বর্তমানে গালওয়ান উপত্যকায় অন্তত ২৩টি স্থানে নজরদারির জন্য কাঠামো গড়ে তুলেছে চিন সেনা। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, গালওয়ান উপত্যকা কাদের, তা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত। অতীতে তাদের যে অবস্থান ছিল, সেটাই এখন চিন মানতে চাইছে না! ভারতের আশা, দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী স্তরে সীমান্ত প্রশ্নে যে ঐকমত্যে পৌঁছনো হয়েছিল, তা আগামী দিনে মেনে চলবে বেজিং।