লাদাখে ভারতীয় সেনার কনভয়। ছবি: পিটিআই।
শুধুমাত্র চিনা ফৌজ নয়। শীতের লাদাখে আরও বড় শত্রু প্রকৃতি। প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলা করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) কৌশলগত অবস্থানগুলি দখলে রাখতে তাই চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি চলছে ভারতীয় সেনার। সেই সঙ্গে চলছে উচ্চ তুষারক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহের পালা।
একটি মার্কিন রিপোর্ট জানাচ্ছে, আসন্ন শীতে লাদাখের এলএসি-তে মোতায়েন ভারতীয় সেনার জন্য আমেরিকা থেকে শীতের উপযোগী পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানি করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির হাতিয়ার হয়েছে, চার বছর আগে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা চুক্তি।
২০১৬ সালের ১ অগস্ট সই হওয়া ওই ভারত-মার্কিন ‘লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম এগ্রিমেন্ট’ অনুযায়ী, প্রয়োজনের সময় একে অপরকে সামরিক সরঞ্জাম, রসদ-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোগত সহযোগিতা এবং জাহাজ-বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করবে।
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে বেজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা চললেও এলএসি পেরিয়ে ঢুকে পড়া চিনা ফৌজ সহজে ফিরে যাবে বলে মনে করছে না নয়াদিল্লি। তাই দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
আরও পড়ুন: গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বাগুইআটি থেকে উদ্ধার ২টি হাতির দাঁত
সেনা সূত্রের খবর, আসন্ন শীতে লাদাখের এলএসি-তে মোতায়েন সেনার জন্য শীতের উপযোগী পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম এবং রসদ পাঠানোর পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিকাঠামো নির্মাণে। লাদাখের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ তেলের ট্যাঙ্ক। এই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ফুয়েল ডাম্প’-গুলির প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৪ লক্ষ লিটার। সেগুলিতে পৃথক ভাবে মজুত করা হচ্ছে সেনাদের রান্নার কেরোসিন, সামরিক ট্রাক আর ট্যাঙ্কের ডিজেল এবং যুদ্ধবিমান-হেলিকপ্টারের ‘অ্যারো টার্বাইন ফুয়েল’।
সেনার একটি সূত্রের খবর, লেহ্ থেকে হেলিকপ্টারে খাবার, ফলের রসের প্যাকেট, জ্বালানি তেলের সঙ্গেই প্রবল শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁবু, গরম কাপড়ের সেনা পোশাক, বিশেষ জুতো, বরফে ব্যবহারের সানগ্লাস পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এলএসি লাগোয়া ফরোয়ার্ড পোস্টগুলিতে। আর সেই জ্বালানি এবং সরঞ্জামের বড় অংশই এসেছে আমেরিকা থেকে।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশের লক আপে ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ মহিলার
সেনার একটি সূত্রের দাবি, শীতের লাদাখে ঘাঁটি গড়ার কাজে সিয়াচেন হিমবাহের অভিজ্ঞতা খুবই কার্যকর হয়েছে। পাক হামলা ঠেকাতে সিয়াচেনে বছরভরই মোতায়েন থাকে ভারতীয় সেনা। কারাকোরাম পর্বতের প্রায় ১৯ হাজার ফুট উচ্চতায় শীতের মরসুম কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় সেনার অনেক অফিসার এবং জওয়ানেরই। তখন সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে যায়। অন্যদিকে, পূর্ব লাদাখে শীতের মরসুমে তাপমাত্রা হয় মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে চিনা ফৌজ অভিজ্ঞতায় নিরিখে অনেক পিছিয়ে বলেই সেনার ওই সূত্রের দাবি।