রাতসারে অনু সিংহের বাড়ির বাইরে তখনও প্রহরায় পুলিশ। ভিতরে চলছে মাটি খোঁড়ার কাজ। ছবি: সংগৃহীত।
সার দেওয়া গাড়ির বিশাল বহর যখন একের পর এক গ্রামের কাঁচা রাস্তা বেয়ে ঢুকছিল, তখন উত্তরপ্রদেশের ছোট্ট গ্রাম রাতসারের মানুষজন একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলেন। ‘বিশেষ অতিথি’দের মধ্যে পুলিশ ছাড়াও ছিলেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কর্তারা। ছিল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দল। এমনকি, গোয়েন্দা কুকুর বাহিনীও। সাতসকালে তাঁদের গাড়িগুলি এসে দাঁড়ায় গ্রামেরই এক বাসিন্দা অনু সিংহের বাড়ির সামনে। কেন আসে, সেই কারণ জানাজানি হতেই চমকে যান গ্রামবাসীরা।
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার গাদোয়ার থানার অন্তর্গত রাতসার। এই রাতসারেরই একটি বাড়ির নীচে অন্তত ১০০টি দেহ পোঁতা আছে বলে খবর পেয়েছিল কমিশন। সেই খবর সরেজমিনে যাচাই করে দেখতেই পুলিশ, ফরেন্সিক-সহ গোয়েন্দা কুকুর বাহিনী নিয়ে গত শুক্রবার সকালে হাজির হয় কমিশনের বিশেষ দল।
কমিশনের কাছে এই খবর পৌঁছে দিয়েছিলেন কানাডাবাসী এক ভারতীয় শালিনী সিংহ। নিজেকে ওই বাড়ির মালিক অনুর আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, বাড়িটির নীচে অন্তত ১০০টি মৃতদেহ পোঁতা আছে। তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে তিনি কী প্রমাণ দিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট করে জানায়নি কমিশন। তবে ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে বাড়ির উঠোন খুঁড়তে শুরু করে তারা।
বাড়ির মালিক তাঁদের বার বার বাধা দেন। এমনকি বিনা নোটিসে এ ভাবে খোঁড়াখুঁড়ি কেন করা হচ্ছে, তা-ও জানতে চান। উত্তরপ্রদেশের মানবাধিকার কমিশনের কর্তারা অবশ্য তার জবাব দেননি। অন্য দিকে, দীর্ঘ ক্ষণ খোঁড়াখুঁড়ির পরও ওই বাড়ির মাটির তলা থেকে কোনও দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি বলে সূত্রের খবর।
বাড়ির মালিক অনু বলেন, ‘‘যিনি এই অভিযোগ করেছেন, তিনি নিজেকে আমার সৎবোনের কন্যা বলে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। আমি ওঁকে চিনিও না। ওঁকে বার বার মুখ দেখানোর অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি দু’হাতে মুখ ঢেকে রেখেছেন এবং আমাকে মুখ দেখাননি।’’ শালিনী কমিশনকে জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ির নীচে ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে অন্তত ১০০টি দেহ পুঁতে ফেলা হয়েছে। যেখানে দেহ পোঁতা হয়েছে, তার উপরে গাছও পুঁতে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন শালিনী। তবে বাড়ির মালিক অনু জানিয়েছেন, যিনি নিজের মুখই দেখাতে চান না, এমন একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে কী ভাবে বিনা নোটিসে একটা বাড়ির উঠোন খুঁড়ে ফেলা হল, তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।