প্রতীকী চিত্র।
বিদেশি মামলায় বন্দিদের কেউ নিজের নাম ঠিক করে বলতে পারেন না। কেউ আবার নিজের নাম বললেও জানেন না বাবার নাম। উল্টো পাল্টা ঠিকানা বলেন। ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সাজার মেয়াদ ফুরনোর পরও তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো যায় না। শিলচর সেন্ট্রাল জেলে এই কারণে বহু বছর ধরে আটকে আছেন বেশ কয়েক জন। তাঁদের বাড়ির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ফলে ডিটেনশন সেন্টার নামের জেলেই দিনের পর দিন রাখতে হচ্ছে, ভারত সরকারকেও তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর মহকুমা থেকে ধরে শিলচর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়েছে ২৬ বছরের জাকির হোসেনকে। নিজের নামটা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না। সব কথায় তাঁর একটাই জবাব, "নাই, কিছু নাই।" জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন অবস্থাতেই বিভিন্ন সময়ে শিলচর ডিটেনশন সেন্টারে এসেছেন দেবদাস রবিদাস, আলম খান, দীগেন্দ্র নমঃশূদ্র, এনামুদ্দিনরা।
করিমগঞ্জ জেলে সাজা কাটানোর পর ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ দেবদাস রবিদাসকে শিলচর ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়। আদালতের নথিতে তাঁর ঠিকানা সিলেট জেলার বাদ্রা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সিলেটে ওই ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিকানাটি ঠিক না ভুল, দেবদাসের কাছ থেকে আট বছরেও জবাব মেলেনি।
আলম খানের সাজা ফুরিয়েছে ছ’বছর আগে। তাঁর নথিতে লেখা, বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার পাইনুর থানার কালটাপাড়ায়। এমন কোনও ঠিকানাই মেলেনি বাংলাদেশে। দীগেন্দ্র নমঃশূদ্র ২০২০ সালের ৮ মে জেলে ঢোকার দিন থেকে বলে চলেছেন, তাঁর বাড়ি অসমের করিমগঞ্জ জেলার বাজারিছড়ায়। কিন্তু বন্দি হিসেবে তাঁর পরিচয়, ঢাকার পৌলিয়া কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা রসিক নমঃশূদ্রের পুত্র। দীগেন্দ্রর যেমন বাংলাদেশের ঠিকানা বার করা যায়নি, তেমনি বাজারিছড়ার বাড়ি থেকেও কেউ কখনও এসে খোঁজ নেননি।
এনামুদ্দিন আড়াই বছর ধরে জেলে থেকে এখন অনেকটাই সুস্থ। তাঁর অভিযোগ, ঠিকানা তো বটেই, পুলিশ তাঁর নামটাও বদলে দিয়েছে! আসলে তাঁর নাম সেলিমুদ্দিন। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের করণদীঘি। কিন্তু পুলিশ জকিগঞ্জের সালেপুর বলে উল্লেখ করায় এই সাজাপ্রাপ্তকে এখন বাংলাদেশেই পাঠাতে হবে, না হলে আজীবন রাখতে হবে জেলে।
এই সব সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে সরব হয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি। তাদের বক্তব্য, মানসিক ভারসাম্যহীনদের এ ভাবে ধরে জেলে পাঠানো অনৈতিক। পুলিশ এমন মানুষদের রাস্তায় দেখলে মানবিক কারণে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে। পুলিশ কর্তারা অবশ্য শোনান, ধৃতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই আদালতে তোলা হয়। পরে বিচারকের নির্দেশে পাঠানো হয় জেলে। তাঁদের কথায়, অনেকে ধরা পড়ার পরে ইচ্ছাকৃত ভাবে উল্টো পাল্টা ঠিকানা বলেন। অনেকে শাস্তিভোগের সময় মানসিক অবসাদে ভোগেন। শিলচরের জেল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জেলে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন, চিকিৎসা করেন। কোনও কোনও সময় মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েও চিকিৎসা করানো হয়। "ঠিকানা খুঁজে পাওয়া না গেলে কী আর করা! এ ভাবেই রাখতে হবে তাঁদের", বললেন এক জেলকর্তা।