ভার্চুয়াল সমাবর্তন মঞ্চে পড়ুয়া ‘হাজির’ ডিজিটাল অবতারে।
সেনেট সদস্যরা একে একে হেঁটে এলেন। কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠে উপস্থিত হলেন মঞ্চে। সার দিয়ে দাঁড়ালেন সকলে। দর্শকের আসন থেকে দেখলে মঞ্চের বাঁ দিকে তিন সারিতে ৩০ জন, আর ডান দিকে ২৮ জন। তার পরে ধীরে ধীরে হেঁটে এলেন অধ্যক্ষ। মঞ্চের মাঝখানে রাখা চেয়ারে বসলেন। একই সঙ্গে বসলেন পিছনের সেনেট সদস্যরা। আইআইটি বম্বের ৫৮তম সমাবর্তন শুরু হল কবিগুরুর গানে। “অন্তর মম বিকশিত করো / অন্তরতর হে। নির্মল করো উজ্জ্বল করো সুন্দর করো হে।...”
করোনা সংক্রমণে রাজ্যগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্র শীর্ষে, আর শহর-মহানগরগুলির মধ্যে শীর্ষে মুম্বই। সেখানে এত জনের এই সমাবেশ! না। এঁরা কেউ এক সঙ্গে আসেননি মঞ্চে। প্রত্যেকে এসেছেন একা। ছবি তুলে রাখা হয়েছে প্রত্যেকের। তার পরে ডিজিটালি সেগুলি জুড়ে নেওয়া হয়েছে। ঠিক যে ভাবে সিনেমায় বিশাল ভিড় বা যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিকদের জুড়ে নেওয়া হয়। সে ভাবেই গোটা অনুষ্ঠানটি হল ভার্চুয়ালি। ‘দূরে রইলেন না’ ছাত্ররাও। একে একে তাঁরা এলেন। হাতে তুলে নিলেন শিক্ষান্তের স্বীকৃতিপত্র ও পদক।
এই পর্বটিতে ভার্চুয়াল মঞ্চে প্রত্যেক ছাত্র এলেন তাঁদের ডিজিটাল অবতারে। দূর-দূরান্তে বসে আজকের শিশু থেকে তরুণ প্রজন্ম যে ভাবে অনলাইন গেম খেলে নিজেদের ডিজিটাল অবতারে— এ অনেকটা তারই মতো। ছাত্ররা মঞ্চে এসে মাথা নুইয়ে সম্মান জানালেন ২০১৬-য় পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানী ডানকান হ্যালডেনকে। প্রধান অতিথি হিসেবে তিনিও এলেন মঞ্চে। অবশ্যই ডিজিটাল অবতারে।
আরও পড়ুন: তৃণমূল থেকে রত্না অপসারিত? ধন্দ জিইয়ে থাকায় ধোঁয়াশা কাননেও
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৬২ বছরের ইতিহাসে এমন সমাবর্তন অভাবনীয়। বিজ্ঞানী হ্যালডেন বললেন, “গবেষণায় যাঁরা যুক্ত, এই অনুষ্ঠান থেকে তাঁদের প্রত্যেকের কিছু শেখার আছে।” অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন বিশিষ্ট বিনিয়োগকারী স্টিফেন এ সোয়ার্চম্যান। তিনি বললেন, “বিশ্বে উদ্ভাবনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে ভারত।” ঘণ্টা দুয়েকের এই অনুষ্ঠানে ২০২০-র রাষ্ট্রপতি পদকও ভার্চুয়াল মঞ্চে এসে হাতে তুলে নিলেন এক ছাত্র।
আইআইটি বম্বের ডিরেক্টর শুভাশিস চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ছাত্ররাই আমাদের অগ্রাধিকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের সিমেস্টার কী ভাবে শেষ করা যেতে পারে, এই বিষয়ে আমরা প্রথম জোরালো পদক্ষেপ করলাম।” কিন্তু আগামী সিমেস্টারের কী হবে? শুভাশিসবাবু জানিয়েছেন, সেনেটে দীর্ঘ আলোচনার পরে স্থির হয়েছে, গোটাটাই চলবে অনলাইনে। ছাত্রদের সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না।
করোনা অতিমারিতে রুদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হয়ে সকলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার, সকল কাজে স্বাভাবিক ছন্দ সঞ্চারিত করার ইচ্ছে, বাস্তবে এমন রূপ পাবে— ভেবেছিলেন কি সেই মানুষটি, যাঁর গানে আজ সূচনা হল এ দিনের এই ই-সমাবর্তন! গীতাঞ্জলির ওই গানেই তো লিখে গিয়েছেন, “যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, / মুক্ত করো হে বন্ধ, / সঞ্চার করো সকল কর্মে / শান্ত তোমার ছন্দ।”