নিতিন গডকড়ী। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী জমানায় বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ-সহ একের পর অভিযোগ ওঠার পরে যথেষ্ট চাপের মুখে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনেও তারা বিপুল ধাক্কা খেয়েছে বিরোধী জোটের কাছে। এই অবস্থায় গোয়ায় দলের এক বৈঠকে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর একটি মন্তব্য তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বলেন, ‘‘বিজেপি একটা আলাদা ধরনের দল। যদি আমরা কংগ্রেস যা করেছিল সেটাই করে যাই, তা হলে ওদের বিদায় করে আমাদের আনার অর্থ কী?”
গোয়ায় দলের শীর্ষ নেতাদের সামনে গডকড়ীর এই মন্তব্যের পিছনে অনেকেই বিজেপির অন্দরের অন্য রাজনীতির অঙ্ক দেখছেন। আরএসএসের অত্যন্ত কাছের লোক বলে পরিচিত গডকড়ীর সঙ্গে মোদী-অমিত শাহের দূরত্ব নিয়ে বিস্তর চর্চা বহু দিন ধরেই রয়েছে। তার উপর মোদী-শাহের জমানায় নানা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে, যাকে বিরোধী নেতাদের অনেকেই অলিখিত জরুরি অবস্থা বলে সরব হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মোদী যে ভাবে ৫০ বছর আগের জরুরি অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন, তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি মোদী জমানায় বিশেষ করে দুর্নীতি, বেকারত্বের মতো বিষয় নিয়ে আমজনতার ক্ষোভও নতুন নয়। অনেকেই অভিযোগ তুলছেন, কংগ্রেস আমলেও বেকারি, দুর্নীতি ছিল, কিন্তু তা কখনওই এ ভাবে সরকারি মদত পায়নি। এই পরিস্থিতিতে গডকড়ী দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘যদি আমরা কংগ্রেসের মতো একই ভুল করি, তা হলে কংগ্রেসকে সরিয়ে আমাদের আনার কী অর্থ হয়? আগামী দিনে পার্টির কর্মীদেরও বুঝতে হবে, রাজনীতি একটা মাধ্যম, যার সাহায্যে সামাজিক ও আর্থিক সংশোধন করা সম্ভব।” একই সঙ্গে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার ডাকও দিয়েছেন তিনি, যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে
করছেন অনেকে।
মোদী-শাহের জমানায় দেশে জাতপাতের বিভাজন ক্রমশ বাড়ছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গটিও সভায় টেনে গডকড়ী জানিয়ে দেন, যারা জাত নিয়ে রাজনীতির কথা বলবে, তাদের দলে জায়গা হবে না। তিনি যে এর ঘোর বিরোধী, তা-ও বুঝিয়ে দেন।
বিজেপি-শাসিত গোয়ায় দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের মন্ত্রী যে ভাবে একাধিক বিষয় তুলে দলকে সতর্ক করেছেন, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই
মনে করছেন, গডকড়ীর মাধ্যমে পরোক্ষে মোদী-শাহকেই কড়া বার্তা দিয়েছে সঙ্ঘ।