‘স্বৈরাচারী’ তকমা ঘোচাতে মরিয়া মোদী

শুধু হাবে ভাবে নয়, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে সামনে রেখে সে কথাটি ঘুরিয়ে বলেও ফেললেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কেউ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইলে তাঁকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলাটা সহজ হয়ে গিয়েছে। কেউ যদি শৃঙ্খলা আনতে চান, তাঁকে বলা হয় স্বৈরাচারী!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:৩৯
Share:

নরেন্দ্র মোদী

মনমোহন সিংহের সঙ্গে হাসিমুখে হাত মেলাচ্ছেন, মঞ্চের অন্য প্রান্তে থাকা কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার হাত ধরে কথাও বলছেন। যা দেখে প্রশ্ন উঠছে, নরেন্দ্র মোদীর হল কী! জবাবে অনেকে বলছেন, আসলে মোদী হাবেভাবে বোঝাতে চাইছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ‘স্বৈরাচারী’, ‘অগণতান্ত্রিক’ ইত্যাদি অভিযোগগুলি সত্যি নয়।

Advertisement

শুধু হাবে ভাবে নয়, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে সামনে রেখে সে কথাটি ঘুরিয়ে বলেও ফেললেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কেউ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইলে তাঁকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলাটা সহজ হয়ে গিয়েছে। কেউ যদি শৃঙ্খলা আনতে চান, তাঁকে বলা হয় স্বৈরাচারী!

গোটা অভিধান তাঁর সম্পর্কে খুলে দেওয়া হয়!’’

Advertisement

উপরাষ্ট্রপতি পদে বেঙ্কাইয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য। লক্ষ্য অবশ্যই বেঙ্কাইয়া। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে যাঁর কাজ নিয়ে বিজেপির দাবি, উনি শৃঙ্খলা আনতে চাইছেন। কিন্তু বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। কিন্তু এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্রে এটা বুঝতে উপস্থিত কারও অসুবিধা হয়নি যে, মোদী আসলে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগেরই জবাব দিলেন ঘুরপথে।

দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ছিল উপরাষ্ট্রপতি পদে বেঙ্কাইয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান। সেই মঞ্চে বেঙ্কাইয়া, মোদী ছাড়াও দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং এইচ ডি দেবগৌড়া ছিলেন। ছিলেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, রাজ্যসভার নেতা অরুণ জেটলি। বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ কেরলে ব্যস্ত থাকায় এসেছিলেন উপ-বিরোধী দলনেতা আনন্দ শর্মা। আর দর্শক-আসনে মন্ত্রী, আমলা, নেতারা।

গত চার বছরের বেশি সময় ধরে মোদীর বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতন্ত্রের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। যখনই তাঁর কোনও কাজ বা বক্তব্য নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছেন, তখনই সুকৌশলে তা ঘুরিয়ে দিয়েছেন মোদী। যেমন, সম্প্রতি মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে ঝড় উঠেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, রাফাল, নোটবন্দি-সহ গুচ্ছ গুচ্ছ ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতেই এ সব করা হচ্ছে। তা না হলে অভিযোগ যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছক কষার, সেখানে তদন্তে শুধু পুণে পুলিশ কেন? দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার চক্রান্ত হলে তো আইবি, সিবিআই, র, এনআইএ-র মতো তাবড় সংস্থার মাঠে নামা উচিত। বিজেপি অবশ্য এর জবাবে চুপ!

বিজ্ঞান ভবনের আজকের অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের অনেকেই ছিলেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘বাজপেয়ীর মৃত্যুর পরে মোদী নিজেকে উদার প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মনমোহন সিংহ, দেবগৌড়া, আনন্দ শর্মার সঙ্গে কথা বললেও এ দিন মঞ্চে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে রাখা হয়নি! আজ মোদী তাঁকে নিয়ে একটি কথাও বলেননি। আডবাণীর প্রতি মোদীর অবহেলা স্পষ্ট। যদিও বেঙ্কাইয়া কিন্তু আডবাণীর উল্লেখ করেছেন।’’

বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘আডবাণীর একটি বক্তব্য আমি সারা জীবন মনে রাখি। আদর্শের থেকেও আদর্শ আচরণ বজায় রাখতে হবে।’’ মোদী চলে যাওয়ার পর বেঙ্কাইয়া নীচে নেমে আডবাণীর সঙ্গে দেখাও করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement