মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) এবং গণধর্ষণের অভিযোগে ইতিমধ্যেই উত্তাল হয়েছে দেশ। চাপ বাড়ছে বিজেপি সরকারের উপর। মণিপুরের ঘটনায় ইতিমধ্যেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও জানালেন, সুযোগ পেলে তিনি এবং ‘ইন্ডিয়া’(ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স)-র কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী মিলে মণিপুর পরিদর্শনে যেতে চান এবং সেখানকার পরিস্থিত খতিয়ে দেখতে চান।
বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সভা মঞ্চের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, “মণিপুরের যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, সেটা সরানো হলেও অনেকেই তা ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন। ভিডিয়োটি দেখে মনে হচ্ছে আমরা এ কোন দেশে রয়েছি। আমাদের হৃদয় কাঁদছে, বুক কষ্টে জ্বলছে। বিজেপি নেতারা এক বারও ভেবে দেখেছেন, মহিলাদের প্রতি এই অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে কী বলবেন। লজ্জাজনক, অসম্মানজনক ঘটনা। ‘ইন্ডিয়া’ মহিলা, দলিত, সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের উপর হওয়া নৃশংসতার বিরুদ্ধে লড়ছে। মণিপুরের পাশে আছে ‘ইন্ডিয়া’, শান্তি ও একতা পক্ষে আছে ‘ইন্ডিয়া’। আমরা অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীরাও এই নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সুযোগ পেলেই আমরা কয়েকজন মণিপুর পরিদর্শনে যেতে চাই। সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চাই।”
প্রায় ৭৮ দিন পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুর হিংসা প্রসঙ্গে নীরবতা ভেঙেছেন। বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে সংসদ ভবন চত্বরে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার। ওই ঘটনার জন্য দেশের ১৪০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।’’ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় তিনি ব্যথিত এবং ক্রুদ্ধ বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মণিপুরের পাশাপাশি রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বার্তা দেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে মমতা বলেন, “শুধু মণিপুর প্রসঙ্গে কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী, সঙ্গে রাজস্থান, ছত্তিসগড় এবং বাংলার কথাও জুড়েছেন। কিন্তু দেশটাকে ভেঙে দিয়েছেন। এ ভাবে চলতে পারে না। খারাপ জিনিস সবসময় খারাপই হয়। আমাদের আক্রমণ করার জন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে দমন করে রাখা যায় না। আমাদের সঙ্গে তো সব সময় লড়াই চলছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে এই সরকার। নিজের বক্তৃতায় তিনি বলেন, তার সরকার, সকলের সরকার। কিন্তু তা নয়, তাঁর সরকার শুধু মাত্র একটি দলের জন্যই, যা খুবই ভয়ঙ্কর। এরা সন্ত্রাসের সওদাগর। এর জন্যও আমরা দেশবাসীর কাছে দুঃখিত।”
বুধবার সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মণিপুরের ওই ভিডিয়ো ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। যদিও ভিডিয়োটি কিছুক্ষণের মধ্যেই সমাজমাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। মণিপুর পুলিশের দাবি ভিডিয়োটি গত ৪ মে তোলা। থৌবল জেলায় নংপোক সেকমাই থানার অদূরে ওই দুই মহিলার উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। বুধবার সমাজমাধ্যমে ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার সময় হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরে গৃহহীনদের আশ্রয় শিবিরেই ছিল মমতার পাঠানো তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন দলে রয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন এবং কাকলি ঘোষদস্তিদার। রাজ্যসভার বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবও রয়েছেন ওই দলে। মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সব পক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তার পর রিপোর্ট আকারে তা তুলে দেওয়া হবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।