মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের ভোটগণনা। মল্লিকার্জুন খড়্গেই যে ভোটে জিতে সভাপতি হচ্ছেন, সে বিষয়ে কংগ্রেস নেতারা নিশ্চিত। একই সঙ্গে, সভাপতি হয়েই মল্লিকার্জুনকে জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলেও তাঁরা নিশ্চিত। একটি চ্যালেঞ্জ, রাজস্থানে অশোক গহলৌত বনাম সচিন পাইলট বিবাদ। অন্যটি গুজরাত-হিমাচলের বিধানসভা নির্বাচন।
গান্ধী পরিবার প্রথমে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতকেই কংগ্রেস সভাপতির পদে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু গহলৌত মরুরাজ্যে তাঁর বিরোধী শিবিরের নেতা পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে রাজি হননি। গহলৌতের অনুগামী বিধায়কেরা কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। সেই বিদ্রোহীদের পাণ্ডাদের ‘শো-কজ়’ করা হয়েছে। গহলৌত নিজে সনিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু এ সবের পরেও গহলৌতই মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে যাবেন, না কি আগামী বছর রাজস্থানের ভোটের আগে পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বা প্রদেশ সভাপতির পদে ফেরানো হবে— সে সবের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভাপতি নির্বাচন মিটে গেলেই এ বিষয়ে ফয়সালা হবে। বিদ্রোহীদের যে শো-কজ় করা হয়েছিল, সে বিষয়েও শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু মল্লিকার্জুন সভাপতি হয়েই গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর মতো পদক্ষেপ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গহলৌত সভাপতি নির্বাচনে মল্লিকার্জুনের নামের অন্যতম প্রস্তাবকারী ছিলেন। তিনি দলের রীতি ভেঙে মল্লিকার্জুনকে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছেন। উল্টো দিকে গান্ধী পরিবারের একাংশ মনে করছে, পাইলটের এ বার সুযোগ পাওয়া উচিত। পাইলটকে প্রশ্ন করলে উত্তর মিলছে, ‘‘আমাদের সকলের এক হয়ে রাজস্থানে ফের কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করা উচিত।’’ গহলৌত নিজের অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করতে চাইছেন। তিনি কংগ্রেস সভাপতি পদে মল্লিকার্জুনের মতো প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তেমনই সংগঠনের সব স্তরেই অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই বলে যুক্তি দিয়েছেন। সচিন পাইলটের নাম না করে তিনি বলেছেন, নবীন প্রজন্মের নেতাদের উচিত, কঠোর পরিশ্রম করে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা। যে সব তরুণ নেতা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন, তাঁদের ‘সুবিধাবাদী’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন গহলৌত।
কংগ্রেসের একাধিক নেতা মনে করছেন, রাজস্থানের বিবাদ সামলানোর সঙ্গে মল্লিকার্জুনকে সভাপতি হয়েই প্রথমে গুজরাত ও হিমাচলে কংগ্রেসের খারাপ ফলের দায় নিতে হতে পারে। কারণ দুই রাজ্যেই বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় কংগ্রেস নেই। আজ কংগ্রেস হিমাচলের ভোটের প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। কিন্তু হিমাচল বা গুজরাত, দুই রাজ্যেই কংগ্রেসের প্রচারে হাওয়া ওঠেনি। গুজরাতের ভোটের ভারপ্রাপ্ত গহলৌত আজ যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘লোকে যা-ই মনে করুক, আমরা গুজরাতে ভাল ভাবেই প্রচার করছি। আমরা শহরাঞ্চলে দুর্বল হতে পারি, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট শক্তিশালী।’’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির সঙ্গে জোট হতে চলেছে গুজরাতে। তার ফলে আদিবাসী ভোটে ফায়দা মিলবে।
কংগ্রেসের একাংশের আশা ছিল, গুজরাতের ভোটের আগে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্যে ঢুকলে কংগ্রেসের পালে হাওয়া উঠতে পারে। কিন্তু কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত চলা ওই পদযাত্রা গুজরাতে ঢুকছেই না। তবে মহারাষ্ট্রে ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও এনসিপি-কে যাত্রায় শামিল করতে উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেস। এ দিন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতারা উদ্ধব ও শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে নান্দেড়ে রাহুলের জনসভায় উদ্ধব ও পওয়ার যোগ দেবেন।
গত কাল কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হওয়ার পরে সমস্ত রাজ্য থেকে দিল্লিতে ব্যালট বাক্স নিয়ে আসা হচ্ছে। কংগ্রেস সদর দফতরে কাল সকাল ১০টা থেকে প্রায় সাড়ে ন’হাজার ভোট গোনা শুরু হবে। এরই মধ্যে রাহুল অন্ধ্রে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। নতুন সভাপতির উদ্দেশে দেওয়া রাহুলের বার্তার জন্যও অপেক্ষা করছেন কংগ্রেস নেতারা।