হিমাচল প্রদেশে ভোটের প্রচারে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
গুজরাতের পরে এ বার হিমাচল প্রদেশেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির তাস খেলল বিজেপি।
আগামী শনিবার হিমাচলে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আজ বিজেপি নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল। ইস্তাহারে ঘোষণা করা হয়েছে, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি জারি করবে।
উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনের আগেও একই তাস খেলেছিল পদ্মশিবির। তাতে ফায়দা মিলেছিল বলেও মত বিজেপি নেতৃত্বের। সম্প্রতি গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও রাজ্যে বিজেপি ঘোষণা করেছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হবে। আজ শিমলায় বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা দলের ইস্তাহার প্রকাশের সময় অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির সমীক্ষা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিরোধীরা একে একদিকে যেমন ধর্মের নামে মেরুকরণের চেষ্টা বলে মনে করছেন, তেমনই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রতিশ্রুতিকে নির্বাচনী ভাঁওতা বলেও দাবি করছেন। কারণ রাজ্য স্তরে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা সম্ভব নয়। করলে তা জাতীয় স্তরে, গোটা দেশে করতে হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হলে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, দত্তক, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়ে সব ধর্মের মানুষকে একই আইন মেনে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে শরিয়ত আইন গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে বলে অভিন্ন দেওয়ানি আইন নিয়ে মুসলিমদের আপত্তি রয়েছে।
হিমাচলের জনসংখ্যার মাত্র ২.১ শতাংশ মুসলিম। চম্বা, শিমলার উপরের এলাকা, সিমরৌর বিলাসপুর, মণ্ডীর কিছু এলাকায় মুসলিমদের বাস। হিমাচল রাজ্য গঠনের পর আজ পর্যন্ত কোনও মুসলিম নেতা বিধায়ক হিসেবে হিমাচলের বিধানসভায় জিতে আসেননি। জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ রাজপুত, ১৮ শতাংশ ব্রাহ্মণদেরই প্রাধান্য বেশি। তা সত্ত্বেও বিজেপি হিমাচলের মতো রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির তাস খেলার পরে বিরোধীদের দাবি, এ থেকেই স্পষ্ট রাজ্যের বিজেপি সরকার চাপে রয়েছে।
গুজরাতে ভোটের মুখে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিজেপি গোটা দেশে এই বিধি চালু করছে না কেন? আজ হিমাচলে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির প্রশ্ন, “বিজেপি তো কেন্দ্রে গত আট বছর ক্ষমতায় রয়েছে। হিমাচলে ক্ষমতায় রয়েছে গত পাঁচ বছর ধরে। জে পি নড্ডার কাছে জানতে চাই, এত দিন তিনি এই কাজ করেননি কেন?” বিজেপি এবং আরএসএস নেতারা গোটা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর দাবি তুললেও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, ‘‘বিজেপির অবস্থান কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান নয়।’’ আইন কমিশন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানালেও গত দু’বছরে কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়নি।
মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “বিজেপি কি মনে করে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি রাজ্য স্তরে চলতে পারে? তা হলে এ রাজ্যে বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন এক রকম হবে, পাশের রাজ্যে অন্যরকম হবে। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গেলে বিধিও বদলে যাবে। যে রাজ্যে বিধি চালু হবে, সেখানেও পুরোপুরি এক রকম হবে না। অনেক রাজ্যেই বিজেপি এ সব বলে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। আসল বিষয়, জনতার সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা।”