PM CARES Fund

PM Cares: টিকার জন্য ১০০ কোটি! পিএম কেয়ার্সের টাকা না পাওয়ার দাবি করল দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা

কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক এবং তাদের কর্মীদের বেতন থেকে নেওয়া টাকা এই তহবিলে জমা পড়েছে। তা সত্ত্বেও এটিকে সরকারি তহবিল বলতে নারাজ কেন্দ্র।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২১
Share:

ফাইল চিত্র।

কোভিডের প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়ায় গতি আনতে পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে দেওয়ার কথা ছিল ১০০ কোটি টাকা। অন্তত ২০২০ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তেমনই বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্নের উত্তরে জানা গিয়েছে, সেই টাকা না পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক, না পেয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। কেন্দ্রের জৈবপ্রযুক্তি দফতর উত্তর এড়িয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর দফতর ফের জানিয়ে দিয়েছে যে, পিএম কেয়ার্স কোনও সরকারি সংস্থা নয়। কাজেই সেটা তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ছে না।

Advertisement

লকডাউন ও কোভিড অতিমারির মোকাবিলায় পিএম কেয়ার্স তহবিল তৈরির সময়েই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থাকা সত্ত্বেও কেন আরও একটি তহবিল তৈরির প্রয়োজন পড়ছে। ওই তহবিলের হিসাব প্রকাশ্যে আনার দাবি উঠলেও সরকার তাতে আমল দেয়নি। নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার তথা তথ্যের অধিকার কর্মী লোকেশ বাত্রা এর আগেও পিএম কেয়ার্স সম্পর্কে তথ্য চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। এবং উত্তর পেয়েছিলেন, এই তহবিলে ব্যক্তিগত অনুদান জমা পড়ে বলে তা তথ্যের অধিকারের আওতায় আসে না।

এ বার বাত্রা তথ্য চেয়েছিলেন ২০২০-র সালের ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর তাতে বলেছিল, ‘‘কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৩১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে পিএম কেয়ার্স অছি পরিষদ। প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়ায় গতি আনতে পিএম কেয়ার্স থেকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে তা ব্যবহার করা হবে।’’ গত বছরের ১৬ জুলাই তথ্যের অধিকার আইনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখ্য তথ্য আধিকারিকের কাছে পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে খরচের সবিস্তার হিসাব চেয়ে আবেদন করেন বাত্রা। বিশেষত, কোভিডের প্রতিষেধক তৈরিতে প্রত্যেক আর্থিক বছরে ভারত সরকার পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে মোট কত টাকা পেয়েছে, কোন কোন সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতিষেধক তৈরিতে যুক্ত আছে, তা জানতে চান তিনি।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সরাসরি জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, ওই খাতে পিএম কেয়ার্সের কোনও টাকা আসেনি। কোভিডের টিকাকরণ সংক্রান্ত সেলের মুখ্য তথ্য আধিকারিকের দফতর বাত্রাকে বলেছে, ‘‘প্রতিষেধক তৈরির জন্য পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে এই দফতর কোনও টাকা পায়নি।’’ এ-ও জানানো হয়, বাত্রার আবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর দফতর, আইসিএমআর এবং জৈবপ্রযুক্তি দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আইসিএমআর বাত্রার প্রশ্নের উত্তর দিয়েও দিয়েছে। সেই উত্তরেও একই কথা, ‘‘প্রতিষেধক তৈরির জন্য আইসিএমআর কোনও টাকা পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে পায়নি।’’ আর জৈবপ্রযুক্তি দফতর জানাচ্ছে, বাত্রার আবেদন ‘অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষের’ কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গোটা বিষয়টিই অস্পষ্ট থাকায় গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আবেদন করেন বাত্রা। দু’দিন পরে সেখানকার মুখ্য তথ্য আধিকারিকের থেকে উত্তর পান, ‘‘পিএম কেয়ার্স কোনও সরকারি কর্তৃপক্ষ নয়, যাকে তথ্যের অধিকার আইন, ২০০৫-এর ২(এইচ) ধারার আওতায় আনা যায়।’’ এর পরে, ১ অক্টোবর পিএমও-র মুখ্য তথ্য আধিকারিকের চিঠিও পান বাত্রা। তাতে পুরনো জবাবের সঙ্গেই বলা হয়, ‘‘আর কোনও তথ্য আপনাকে দেওয়া যাবে না।’’ পিএমও-র আপিল কর্তৃপক্ষের পোর্টালে বাত্রার আবেদন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে।’’

বাত্রার আবেদনটি অবশ্য নীতি আয়োগ এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)-র কাছেও পাঠানো হয়েছিল। সিডিএসসিও-র ওয়েবসাইটে সেই প্রসঙ্গে গত ১৪ সেপ্টেম্বর জানানো হয়েছে, তারা প্রতিষেধক-সহ বিভিন্ন ওষুধের মান-নির্ধারক সংস্থা। প্রতিষেধক তৈরির টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। যাঁর তত্ত্বাবধানে এই ১০০ কোটি টাকা ব্যবহারের কথা ছিল, সেই মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবনের সঙ্গে সংবাদ সংস্থার তরফে যোগাযোগ করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

প্রধানমন্ত্রীর নামেই পিএম কেয়ার্স তহবিল। তিনিই চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা এর অছি পরিষদের সদস্য। পিএম কেয়ার্সের ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি, সই, অশোক স্তম্ভ, জাতীয় পতাকা— সবই রয়েছে। কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক এবং তাদের কর্মীদের বেতন থেকে নেওয়া টাকা এই তহবিলে জমা পড়েছে। তা সত্ত্বেও এটিকে সরকারি তহবিল বলতে নারাজ কেন্দ্র। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার একটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের শীর্ষ ছোঁবে সংক্রমণ। এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও কেন্দ্রের তরফে এমন অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement