উইং কমান্ডার আজিজ তায়েবা
আজও আমার হায়দরাবাদের বাড়িতে আলমারির মধ্যে টাঙানো রয়েছে নীল পোশাকটা। ইস্ত্রি করা। কালও যদি আমাকে ডেকে নেওয়া হয়, আমি ওই পোশাকটা পরে এক ছুট্টে চলে যাব। হোক না আমার পঞ্চাশ!
জানি, সেই ডাকটা আর আসবে না। বুকের মধ্যে অভিমানটা এখনও কুরে কুরে খায়। তবে, সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের খবরটা পেয়ে খুব গর্ব হয়েছে। আমি বায়ুসেনার প্রথম মহিলা অফিসারদের ব্যাচের এক জন। ১৯৯২ সালে প্রশিক্ষণ। ১৯৯৩ সালে চাকরি শুরু। একই প্রশিক্ষণ, একই বেতন, একই কাজের চাপ, একই জায়গা— সব সমান হওয়া সত্ত্বেও আমাদের প্রতি এত বছর ধরে যে বৈষম্যমুলক আচরণ করা হয়েছে, তার যোগ্য জবাব আজ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আমরা যে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলাম, সেখানে লেখা ছিল আমাদের পাকা চাকরি হবে। কিন্তু, প্রথম পাঁচ বছর পরে ১৯৯৮ সালে এসে জানতে চাওয়া হল, আমরা আরও কাজ করতে চাই কি না। বলা হল, সেই কাজের সুযোগ দেওয়া হবে, কিন্তু এখনই পাকা চাকরি হবে না। মুখ বুজে আবার কাজ করে গিয়েছি। ৬ বছর পরে ২০০৪ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এ বার চার বছরের জন্য। কিন্তু, ২০০৮ সালে আমাদের বলা হল, আর নয়। এ বার ছাড়তে হবে বায়ুসেনা। আমাদের অপরাধ— আমরা মহিলা!
আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে অনেকেই পাঁচ বছরের মাথায় চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সেই দলে পুরুষরাও ছিলেন। কেউ ১১ বছর কাজ করে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু, আমরা রয়ে গিয়েছিলাম। কেউ তত দিনে বড় বিমান বা হেলিকপ্টার চালাচ্ছেন। আমি ছিলাম গ্রাউন্ডে। ছোট বেলার স্বপ্ন ছিল আর্মড ফোর্সে কাজ করব। সেই স্বপ্ন এক মুহূর্তে ছিঁড়েখুড়ে সান্ত্বনার মতো করে আমাদের শুধু বলা হয়েছিল, তোমরা যোগ্য বলেই প্রথম পাঁচ বছরের পরে চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আবার ১১ বছর পরেও মেয়াদ বেড়েছে। কিন্তু, আমরা যদি যোগ্যই হব, তা হলে কেন পাকা চাকরি দেওয়া হল না— সে প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারেননি।
আমি মুম্বই থেকে চলে আসি হায়দরাবাদে। এখন বেসরকারি একটি নির্মাণসংস্থায় চাকরি করি। অনেক উঁচু পদে। কিন্তু, সেই চাকরির সঙ্গে স্বপ্নের যোগ নেই। তাই তো মন খারাপ হলেই উঁকি মারি আলমারির ভিতরে। তাকিয়ে থাকি কাঁধে তারা বসানো নীল পোশাকটার দিকে।
লেখক: প্রাক্তন বায়ুসেনা অফিসার
অনুলিখন: সুনন্দ ঘোষ