জয়পুরে সাংবাদিক বৈঠকে সচিন পাইলট। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাত মিটেছে সোমবারই। কিন্তু দল ও সরকারে দুই পুরনো পদ কি ফিরে পাবেন? এই জল্পনার মধ্যেই রাজস্থানে পৌঁছে সচিন পাইলট বললেন, দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি কোনও দাবি করেননি। অনুগত দলীয় কর্মীর মতোই বললেন, দল যে ভাবে কাজ করতে বলবে, সেটাই করবেন। অন্য দিকে জয়পুরে পৌঁছতেই কংগ্রেস নেতাকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানালেন তাঁর অনুগামী সমর্থক কংগ্রস নেতা-কর্মীরা।
অশোক গহলৌতের বিরদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজের অনুগামী ১৯ বিধায়ককে নিয়ে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছিলেন রাজস্থানের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ও রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সচিন পাইলট। প্রায় এক মাসের টানাপড়েনের অবসান হয়েছে সোমবার সন্ধ্যায় রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর। নিজে যেমন কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন, তেমনই দলের হাইকম্যান্ডও তাঁর দাবিদাওয়া বিবেচনা ও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। তার পরেই মঙ্গলবার জয়পুরে ফিরেছেন পাইলট।
বিদ্রোহ পর্বে পাইলটকে দলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং সরকারে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সোমবারের সন্ধ্যার পর তাঁকে সেই দুই পদে ফেরানো হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। আর কংগ্রেস বিধায়ক রাজ্যে ফেরার পর সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে। পাইলট অবশ্য কৌশলী রাজনীতিবিদের মতোই বলেছেন, ‘‘দলের কাছে আমি কোনও দাবি করিনি। আমি এক জন বিধায়ক এবং কংগ্রেস কর্মী। দল আমাকে যা করতে বলবে, তাই করব।’’
আরও পড়ুন: অবস্থার অবনতি প্রণবের, রাখা হয়েছে ভেন্টিলেশনেই
গত এক মাসে পাইলটকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত। এমনকি, তাঁকে ‘নিকম্মা’ পর্যন্ত বলেছেন। কিন্তু জয়পুরে পা রেখে পাইলট অবশ্য কিছুটা সমঝোতার বার্তাই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে আমি দুঃখ পেয়েছি। আমি মনে করি, সে সব ভুলে যাওয়া উচিত। রাজনীতিতে ভাষার একটা সংযমও থাকা দরকার। সেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা ঠিক নয়। ইস্যু ও নীতিভিত্তিক কাজ করা উচিত।’’
আরও পডু়ন: করোনা যুদ্ধে টাকা চাই, মোদীর কাছে ফের বকেয়া মেটানোর দাবি মমতার
প্রায় এক মাসের বিদ্রোহ পর্বে গহলৌত বা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কার্যত কোনও কথাই বলেননি পাইলট বা তাঁর অনুগামী বিধায়কদের কেউ। এ দিন সেই বিষয়টি ফের উল্লেখ করে পাইলট বলেন, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আমরা কখনও কোনও কথা বলিনি। কিন্তু অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কুৎসা রটিয়েছেন। অনেক প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু আমরা ৩০ দিন আগে যে অবস্থানে ছিলাম, এখনও সেখানেই আছি।’’
কী অবস্থান ছিল এক মাস আগে? নিজের দলেরই মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান নেতা অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে এক রাশ অভিযোগ, ক্ষোভ, উষ্মা নিয়ে জয়পুর ছেড়ে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছিলেন পাইলট। সঙ্গে ছিলেন ১৯ জন বিধায়ক। তা হলে গহলৌতের বিরুদ্ধে কি এখনও সেই আগের অবস্থানেই রয়েছেন পাইলট ও তাঁর অনুগামীরা? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইঙ্গিত তেমনই। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতা বা বোঝাপড়া হলেও গহলৌতের বিরুদ্ধে তিনি যে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিলেন, তাতে যে সহজে রণে ভঙ্গ দেবেন না, পাইলটের কথায় তেমন সুরই ধরা পড়েছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।
অন্য দিকে, পৌঁছনোর আগে থেকেই তাঁর জয়পুরের বাড়িতে ছিল পাইলটের অনুগামী কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ভিড়। বিকেলের দিকে তিনি পৌঁছতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। স্লোগান, ফুলের মালায় তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।