দেবদীপ অধিকারী। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
বিপদে পড়েছেন বুঝেও তরুণী চিকিৎসক কেন পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করেননি? প্রশ্ন তুলেছিলেন তেলঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ মাহমুদ আলি।
তেলঙ্গানা রাজ্য পুলিশ থেকে শুরু করে সাইবারাবাদ পুলিশের যাবতীয় বড় কর্তার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ১০০-ডায়াল নিয়ে প্রচার-বিজ্ঞপ্তি চলছে।
প্রশ্ন কিন্তু উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই।
মেয়ের নিখোঁজ ডায়েরি করাতে গিয়ে বুধবার রাতে কী ভাবে তাঁদের এ-থানা থেকে ও-থানায় ঘুরতে হয়েছিল, তা আজ জানিয়েছে নিহত তরুণীর পরিবার। বাবার কথায়, ‘‘রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মেয়ের ফোন বন্ধ দেখে ভেবেছিলাম, চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে হয়তো। ১০টা বাজতেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়। টোল প্লাজায় গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেয়েকে না-পেয়ে কাছের একটি থানায় যাই। তার পর আরও একটি থানায়। দু’জন কনস্টেবলকে বলেও লাভ হয়নি। কেউ ডায়েরি নেয়নি।’’ কোনও থানাই ডায়েরি নিচ্ছে না-দেখে ফের তিনি রাস্তায়-রাস্তায় মেয়েকে খুঁজতে থাকেন বলে দাবি বাবার।
অভিযোগ, রিপোর্ট লিখতে ঘণ্টা পাঁচেক দেরি করেছে পুলিশ। অথচ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পরে কাল তেলঙ্গানা পুলিশ যে প্রেস-বিবৃতি দিয়েছে, তাতে তিন লাইনের একটি অনুচ্ছেদে ‘ইমিডিয়েটলি’ শব্দটি অন্তত তিন বার ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশই জানিয়েছে, বুধবার রাতে ছক কষে শামশাবাদ টোল প্লাজা থেকে বছর ছাব্বিশের ওই তরুণী চিকিৎসককে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু নামে ২০ থেকে ২৬ বছরের চার ট্রাক-কর্মী। বৃহস্পতিবার সকালে শাদনগরে আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের নীচে ধর্ষিতার পোড়া দেহাংশ মেলে। ওই টোল প্লাজা এবং আন্ডারপাস জাতীয় সড়কের কাছেই। দু’টি জায়গাতেই রাত ৯টার পরে পুলিশের নিয়মিত গাড়িতে টহল দেওয়ার কথা। তাই পুলিশি ‘তৎপরতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।
আরও পড়ুন: বিপদে পড়লে ‘নির্ভয়া’ হেল্পলাইন! সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই নম্বর কাজই করে না
অপরাধীদের যত দ্রুত সম্ভব ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবিতে আজ হায়দরাবাদের রাস্তায় নামেন ধর্ষিতার আত্মীয়, পরিজন-সহ বহু সাধারণ মানুষ। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে। শাদনগরের বেশ কয়েকটি মহিলা সংগঠন আজ এলাকায় মোমবাতি মিছিল করে। রাজধানীতে মোমবাতি মিছিল করে কংগ্রেসের যুব মোর্চাও। তরুণীর মা জানিয়ে দেন, তিনি চান, মেয়ের ধর্ষক-খুনিদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হোক। নির্ভয়া থেকে শুরু করে হালের রাঁচী, তামিলনাড়ুর ধর্ষণ প্রসঙ্গ টেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অক্ষয় কুমার, ফারহান আখতারের মতো বলিউড তারকারা।
পরিস্থিতি আন্দাজ করেই আজ কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়নি চার অভিযুক্তকে। শাদনগর নগর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পিছনের দরজা দিয়ে থানায় ঢুকে অভিযুক্তদের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন। স্থানীয় সব বার কাউন্সিলই জানিয়ে দেয়, অভিযুক্তদের হয়ে তাদের কোনও সদস্য মামলা লড়বেন না। সাইবারাবাদ পুলিশ জানায়, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দোষীদের কড়া শাস্তি চেয়ে তারা মেহবুবনগর ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের দ্বারস্থ হতে চায়। জনরোষের আশঙ্কায় আজ প্রথমে অভিযুক্তদের থানা থেকে বার করতেই চায়নি পুলিশ। পরে তাদের জেলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু অভিযুক্তদের নিয়ে পুলিশের গাড়ি থানা থেকে বেরোনো মাত্রই গাড়ি লক্ষ করে পাথর ছুড়তে শুরু করে ক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তিও বাধে। জনতার দাবি— চার জনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কোনও মতে বিক্ষোভ পেরিয়ে অভিযুক্তদের নিয়ে পুলিশ ভ্যান পৌঁছয় হায়দরাবাদের জেলে। জনরোষের মুখে কাল রাতেই সুর বদলান মন্ত্রী মাহমুদ আলি। বলেন, ‘‘ও আমার মেয়ে। গোটা রাজ্যের মেয়ে।’’ সঙ্গে ফের জুড়ে দেন—১০০-য় ফোন করলে তরুণী হয়তো বেঁচে যেতেন।
নিহত তরুণী রঙ্গা রেড্ডি জেলার কুল্লুরু গ্রামের এক পশু-হাসপাতালে কাজ করতেন। ২০১৭-র ২৩ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এক সহকর্মীর কথায়, ‘‘ডাক্তার ম্যাডাম রোজ নিজের স্কুটিটা শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে পার্ক করে শাদনগরের বাস ধরতেন। সেখান থেকে আবার শেয়ার অটো করে হাসপাতালে। দু’বছরে এক দিনও লেট করেননি ম্যাডাম।’’
গত কাল শামশাবাদ এলাকাতেই অন্য এক মহিলার দগ্ধ দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনের সঙ্গে এর যোগ আছে কি না, জানতে তদন্ত করে পুলিশ। আজ অবশ্য পুলিশ জানিয়েছে, সেটি আত্মহত্যা।