এই চার অভিযুক্তেরই এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। —ফাইল চিত্র
চোখের বদলে চোখ নিলে এক দিন গোটা পৃথিবীটাই অন্ধ হয়ে যাবে— হায়দরাবাদ এনকাউন্টার নিয়ে এই তত্ত্বই যেন ফের সামনে নিয়ে এলেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। নিহত চিন্নাকুন্ত চেনাকাশভুলুর স্ত্রী বললেন, আমার স্বামীকে যাঁরা হত্যা করেছে, তাঁদেরও একই ভাবে খুন করুন।’’ অন্য এক অভিযুক্তের পরিবারের প্রশ্ন, সব ধর্ষণ-খুনের অভিযুক্তদের একই শাস্তি হবে তো? ‘পরিকল্পিত খুন’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন অভিযুক্তদের পরিজনরা।
২৭ নভেম্বর হায়দরাবাদের শামশাবাদে তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। চার অভিযুক্ত চিন্নাকুন্ত চেন্নাকেশভুলু, মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা এবং জল্লু নবীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর আজ শুক্রবার সকালে পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা পালানোর চেষ্টা করলে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে চার জনেরই। এনকাউন্টারের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। উল্টো দিকে পুলিশের এই এনকাউন্টারের সত্যাসত্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কিন্তু যাঁদের মৃত্যু ঘিরে গোটা দেশ তোলপাড়, সেই নিহতদের পরিবারের সদস্যরা কী বলছেন?
বলছেন, পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘ফেক এনকাউন্টার’। চিন্নাকুন্ত চেন্নাকেশভুলুর স্ত্রী বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমাদের বিয়ে হয়েছে এক বছরও হয়নি। আমার স্বামীকে যাঁরা নিয়ে গিয়েছে এবং খুন করেছে, তাঁদেরও একই ভাবে হত্যা করুন। আমি আর বাঁচতে পারব না। ওঁরা (পুলিশ) বলেছিল, কিছু দিন পরেই আমার স্বামীকে ফেরত দেবে। আর এখন ওরা এই কাণ্ড করল। আমি অবশ্যই মরব। স্বামীকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।’’
পুলিশের বয়ান অনুযায়ী এনকাউন্টার হয়েছে ভোর তিনটে নাগাদ। কিন্তু অন্তত সকাল আটটার আগে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন মহম্মদ আরিফের বাবা। তাঁরা জেনেছেন সংবাদ মাধ্যমে। বিলাপের সুরে তিনি বলেন, ‘‘ওরা (পুলিশ) বলছে ওঁকে (আরিফকে) মেরে দিয়েছে। বলছে, এনকাউন্টার করে দিয়েছে। আজ সকালেই আমরা জানতে পেরেছি।’’
আরও পড়ুন: ‘আইন তার কর্তব্য পালন করেছে’, এনকাউন্টারের বর্ণনা দিয়ে বললেন সজ্জানর
আরও পডু়ন: ভোররাতে বিতর্কিত এনকাউন্টার, তেলঙ্গানা ধর্ষণ-খুনের চার আসামীকে গুলি করে মারল পুলিশ
অন্য দুই অভিযুক্ত জল্লু শিবা ও জল্লু নবীনের পরিবারেও একই রকম শোক আর পাহাড়প্রমাণ ক্ষোভ অভিমান। ঘরের ছেলের অপরাধ মেনে নিয়ে এবং গুরুত্ব বুঝেও তাঁরা এনকাউন্টার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এনকাউন্টারের পর দু’জনের হয়ে দেহ শনাক্ত করে পুলিশের খাতায় সই করে এসেছেন জল্লু শিবার বাবা জল্লু রাজাপ্পা। তাঁরাও যে সংবাদ মাধ্যমের কাছেই খবর পেয়েছেন সেটা জানিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এই ধরনের ঘটনায় যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের সবার কি একই বন্দোবস্ত করতে পারবেন?’’