Scholarship

তফসিলি বৃত্তির বহু কোটি টাকা লোপাট

হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তকারী দল উত্তরাখণ্ডের এমন দেড়শোর বেশি বেসরকারি ও সরকার-পোষিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে সরকারি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দেহরাদূন শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

তাঁরা তফসিলি জাতি বা জনজাতির মানুষ। কেউ ঠিকা মজদুর, কেউ বা রিকশাচালক। অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক। নিজেরাই জানেন না, সরকারি খাতায় তাঁরা বিভিন্ন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা সরকার-পোষিত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘ছাত্র’। তাঁদের নামে খোলা ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরের পর বছর জমা পড়ছে তফসিলিদের জন্য বরাদ্দ রাজ্য সরকারের ছাত্র-বৃত্তির মোটা টাকা। তোলাও হয়ে গিয়েছে তা। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তকারী দল উত্তরাখণ্ডের এমন দেড়শোর বেশি বেসরকারি ও সরকার-পোষিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে সরকারি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। জালিয়াতির মাথা হিসেবে যাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েক জন বিজেপি নেতা ও তাঁদের পরিজনও রয়েছে।

Advertisement

উত্তরাখণ্ডে এ ভাবে ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর তফসিলি ছাত্রদের বৃত্তির নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা চলছে। কলেজগুলির কর্তৃপক্ষই এই কাজ করে থাকে বলে অভিযোগ। এই খাতে ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত রাজ্য সরকার মোট ৭২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যার একটা বড় অংশ জালিয়াতি করে হাপিশ করা হয়েছে। ২০১৮-য় হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে আদালতের নির্দেশে দু’টি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট তৈরি করা হয়। একটি দল শুধু দেহরাদূনে ও অন্যটি রাজ্যের বাকি ১১টি জেলার কলেজগুলিতে তদন্তে নামে। দেখা যায়, রাজ্যের বাইরে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান বা জম্মু-কাশ্মীরের নানা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও এই র‌্যাকেটে যুক্ত। উত্তরাখণ্ডের তফসিলি ছেলেরা এই সব কলেজে পড়ছে দেখিয়ে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়তো রাজ্য সরকারের বৃত্তির টাকা। তার পরে তুলে নেওয়া হতো সেই টাকা।

সিটের এক অফিসার জানাচ্ছেন, তদন্তে নেমে তাঁরা দেখেন— যাঁদের ছাত্র বলে দেখানো হয়েছে, কেউ কারখানার ঠিকা শ্রমিক, দোকানের কর্মী বা রিকশাচালক। কেউই কোনও পড়াশোনা করেন না। অনেকের বয়স নেহাতই কম। মালিক তাঁদের কাছ থেকে আধার কার্ড বা অন্য পরিচয় পত্র হাতিয়ে কলেজের লোকেদের সঙ্গে মিলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতেন। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র হিসেবেও নাম তোলা হতো। তার পরে সেই অ্যাকাউন্টে বেসরকারি কলেজের মোটা টিউশন ফি-র ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি হিসেবে পড়ত সরকারি কোষাগার থেকে। পরে সেই টাকা তুলে নেওয়া হতো। যাঁদের নামে এ সব হতো, সেই সব গরিব মানুষগুলো ঘুণাক্ষরেও জানতে পারতেন না কিছু।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অন্তত দেড়শো কলেজের বিরুদ্ধে এ ভাবে জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে দেহরাদূনের ৫৭টি কলেজ ও বাকি ১১টি জেলার ৫৩টি কলেজের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। কলেজের মালিক, কর্মী, দালাল-সহ একশোরও বেশি লোকের নাম রয়েছে এফআইআর-এ। এঁদের মধ্যে বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডের অনেক প্রভাবশালীও রাজনীতিকও রয়েছেন। বিধানসভার প্রাক্তন এক স্পিকারের কলেজেও এই জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। বিজেপি-র এক বিধায়কের ছেলের বিরুদ্ধেও তদন্তকারীরা অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement