—ফাইল চিত্র।
কোভিড অতিমারির মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য ভূমি পূজা এবং শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে রাশ টানার আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ সমাজকর্মী, মুম্বইয়ের সাকেত গোখেল। তাঁর সেই আর্জি আজ খারিজ করে দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।
সাকেতের আর্জি ছিল, করোনা রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে কথা সরকার বার বার বলছে, রামমন্দিরের শিলান্যাস অনুষ্ঠানের আয়োজন তার পরিপন্থী। এই অনুষ্ঠানে তাই অবিলম্বে রাশ টানা হোক। অনেকে এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, কেন্দ্র এবং প্রায় সমস্ত রাজ্য সরকার যেখানে ইদের সময়েও মসজিদে ও বিভিন্ন ধর্মস্থানে ভিড় না-বাড়ানোর কথা বলছে, সেখানে এমন জাঁকজমকপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হন কী ভাবে!
মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের অবশ্য বক্তব্য, পারস্পরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা-সহ যাবতীয় নিয়ম মেনেই ওই অনুষ্ঠান হবে। দু’শো জনের বেশি উপস্থিত থাকবেন না। যার মধ্যে আমন্ত্রিত শ’দেড়েক। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী অফিসার এবং নিরাপত্তা রক্ষী মিলিয়ে আরও প্রায় জনা পঞ্চাশেক আসবেন বলে তাদের প্রাথমিক অনুমান।
আরও পড়ুন: রাজ্যপাল বনাম গহলৌত, দ্বন্দ্বে ঝুলে রাজস্থান
আরও পড়ুন: বাবরি-মামলা চক্রান্ত, আদালতে আডবাণী
অতিমারির মধ্যে অনুষ্ঠান না-করার জন্য জনস্বার্থ মামলাই হোক বা শঙ্করাচার্যের পরামর্শ— উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা নেই সঙ্ঘ-বিজেপি ও অযোধ্যায়। শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ সরস্বতীর মতো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের কেউ কেউ বলছেন, মন্দির নির্মাণ শুরুর পক্ষে এটা শুভ সময় নয়। কিন্তু আয়োজন থামছে না তাতে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের গোবিন্দ শিন্ডে জানিয়েছেন, ৫ অগস্ট ভূমি পূজার জন্য নাগপুরে সঙ্ঘের সদর এবং তার কাছের রামতেক মন্দিরের মাটি, আর সেই সঙ্গে পাঁচ নদীর মিলনস্থলের জল নিয়ে যাওয়া হবে অযোধ্যায়। তাঁর আক্ষেপ, সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাটি ও নদীর জল নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে কড়াকড়ির মধ্যে শিলান্যাসের দিন ঠিক হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
বহু প্রতীক্ষিত মন্দিরের অপেক্ষায় সাজছে অযোধ্যাও। শিলান্যাসের জন্য ৪০ কিলোগ্রামের রুপোর ইট, দূরের দর্শকদের জন্য বিপুল সংখ্যায় বিশাল বৈদ্যুতিন পর্দা, ভিভিআইপিদের জন্য কড়া নিরাপত্তা— সবেরই তোড়জোড় চলছে সেখানে। আগের পরিকল্পনার তুলনায় মন্দিরের উচ্চতা বাড়ছে প্রায় ২০ ফুট। তিন থেকে বেড়ে চূড়ার সংখ্যা হচ্ছে পাঁচ। ট্রাস্টের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর হাতে শিলান্যাস হবে ‘পরম শুভ’ অভিজিৎ মুহূর্তে। যে সময়ে রামচন্দ্র জন্মেছিলেন বলে তাঁদের বিশ্বাস। নরেন্দ্র মোদী ৫ তারিখ এলেও, পূজা শুরু হবে তার দু’দিন আগে থেকেই। বারাণসী থেকে আসবেন বেদজ্ঞরা। বিপুল আয়োজন।
এই সমস্ত কিছু করতে গিয়ে পারস্পরিক দূরত্ববিধি রাখা গেল কি না, সে দিকেও চোখ থাকবে দেশের। অতিমারির মৃত্যু-মিছিলের মধ্যে চোখে লাগতে পারে বাড়তি আড়ম্বরও। বিশেষ করে প্রধান অতিথি যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী।