ফাইল ছবি।
সোমবার বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চের ‘দাভোস অ্যাজেন্ডা সামিটে’ ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময় আচমকাই থেমে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশের দাবি, ‘টেলিপ্রম্পটার (টিপি)’ বিগড়ে যাওয়াতেই মাঝপথে থেমে যেতে হয়েছে মোদীকে। যদিও সরকারি তরফে তার সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী টুইট করে মোদীকে কটাক্ষ করেছেন। টুইটের মর্মার্থ, মোদী এতই মিথ্যে বলছিলেন যে টেলিপ্রম্পটারও তা সহ্য করতে পারেনি। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কিন্তু জানেন কি, কী এই টেলিপ্রম্পটার বা টিপি?
টেলিপ্রম্পটার (টিপি) কী?
সহজ কথায়, বক্তা যে পর্দা দেখে নিজের বক্তব্য রাখেন, তাকে টেলিপ্রম্পটার বা টিপি বলা হয়। মঞ্চাভিনয়ের ক্ষেত্রে যেমন অভিনেতার অভিনয়ের অংশ উইংসের ভিতর থেকে এক জন পড়ে যেতে থাকেন এবং অভিনেতা তা শুনে নিজের অভিনয়ের অংশ বলেন, তাকে বলে ‘প্রম্পট’ করা। যিনি ‘প্রম্পট’ করেন তাকে বলা হয় ‘প্রম্পটার’। কিন্তু দৃশ্য-শ্রাব্য (অডিও-ভিজুয়াল) মাধ্যমে তেমন কোনও ‘প্রম্পটার’ থাকেন না। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বক্তব্য লেখার আকারে বক্তার চোখের সামনে ফুটে ওঠে। বক্তা তা দেখে পড়তে থাকেন। একে বলে ‘টেলিপ্রম্পটার’ সংক্ষেপে ‘টিপি’। সাধারণত, ভাষণ দেওয়ার সময় টিপি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।
লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনে থাকে একটি স্বচ্ছ কাচ। অনেকেই ভাবতে পারেন, সেটি বুলেটপ্রুফের আস্তরণ। কিন্তু না। আসলে ওই কাচটিই টিপি। তাতেই একটি পাশে ভাষণের লেখা ফুটে ওঠে, যা দেখে পড়েন মোদী।
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কী ভাবে কাজ করে টিপি?
নরেন্দ্র মোদী এই সব ক্ষেত্রে যে টিপি ব্যবহার করেন, তাকে বলে কনফারেন্স টিপি। এই প্রযুক্তিতে বক্তা যেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন, তার ঠিক নিচে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে একটি ‘এলসিডি মনিটর’। যে মনিটরটি একজন নিয়ন্ত্রণ করেন। মনিটরের ঠিক উপরে, বক্তার চোখের উচ্চতা অনুযায়ী, থাকে একটি বিশেষ ধরনের কাচের স্তর। তাতে সরাসরি প্রতিফলিত হয় ‘এলসিডি মনিটর’-এর লেখা। কিন্তু যদি এলসিডি মনিটরের লেখার প্রতিফলন কাচে হয়, তাহলে তো তা উল্টো আসার কথা। এখানে ব্যবহার হয় একটি ভিন্ন প্রযুক্তি। ‘এলসিডি মনিটর’-এ যে লেখা থাকে, তাকেই বিশেষ অক্ষর আকৃতিতে (ফন্ট) উল্টো করে লেখা হয় (মিরর ইমেজ), যাতে কাচের আস্তরণে লেখা সোজা হয়ে প্রতিফলিত হয়।
গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন এক জন। তিনি বক্তার বক্তৃতার গতি মেপে লেখা তুলতে থাকেন। যেখানে বক্তা থামেন, সেখানে টেলিপ্রম্পটারের নিয়ন্ত্রকও লেখা থামিয়ে দেন। গোটা প্রক্রিয়াটিই চলে সম্পূর্ণ লোকচক্ষুর অন্তরালে। একমাত্র বক্তা ছাড়া আর কেউ তা দেখতে পান না। তবে বহু ক্ষেত্রেই পেশাদারেরা নিজের হাতেই রাখেন নিয়ন্ত্রণের ভার। ঠিক যেমন খবরের চ্যানেলের সংবাদ পাঠক বা সংবাদ পাঠিকারা করে থাকেন।
টেলিপ্রম্পটারের দাম কেমন?
আকার ও মানের উপর নির্ভর করে ২ লক্ষ টাকা থেকে ১৭ লক্ষ টাকা দামে পাওয়া যায় টেলিপ্রম্পটার।