Business Class

হাতেগোনা বিমানে অর্থের বিনিময়ে ‘বিশেষ সুবিধা’! বিজ়নেস ক্লাসের ইতিহাস কিন্তু চমকপ্রদ

বিমানে এই আরামদায়ক সফরের সুবিধা কিন্তু প্রথম থেকে ছিল না। বিশেষ কারণে তা অনেক পরে চালু হয়েছে।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:০২
Share:
০১ ২০

কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর এক বার বিমানের ইকোনমি ক্লাসকে ‘ক্যাটল ক্লাস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল ঢের। তারুরের মতো যাঁরা নিত্যদিন বিজ়নেস ক্লাসে যাতায়াত করেন, তাঁদের কাছে ইকোনমি ক্লাসের সফর ‘ক্যাটল ক্লাস’-এর মতোই। তবে বিমানে এই আরামদায়ক সফরের সুবিধা কিন্তু প্রথম থেকে ছিল না। বিশেষ কারণে তা অনেক পরে চালু হয়েছে।

০২ ২০

বিমানে প্রায় গোটা দিনের সফর। কিন্তু একটু বেশি টাকা খরচ করলে আর শুধুমাত্র বসে যেতে হবে না। শুয়ে বা আধশোওয়া হয়ে নির্বিঘ্নে সফর করতে পারবেন। অর্ডার করতে পারবেন পছন্দের পানীয় বা খাবার। সত্তরের দশকের শুরুতেও কিন্তু এই ব্যবস্থা ছিল না।

Advertisement
০৩ ২০

প্রথম দিকে বিমানে বিজ়নেস ক্লাস কিন্তু আজকের বিজ়নেস ক্লাসের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল। সত্তরের দশকে বিমানে এই বিশেষ ব্যবস্থার সূচনা। ১৯৫৫ সাল থেকে বিমানে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যে যাত্রীরা বেশি খরচ করে আরামে যাতায়াত করতে চান, তাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু হয়।

০৪ ২০

কিন্তু বিমানে বিজ়নেস ক্লাসের সংযোজন অনেক পরে। ১৯৭০ সাল নাগাদ। বোয়িং ৭৪৭ বিমানে প্রথম এই পরিষেবা চালু হয়। এই সময়েই বাজার ধরার জন্য টিকিটে ছাড় দিতে শুরু করে বিভিন্ন বিমান সংস্থা। ফলে ভাড়া ক্রমে কমতে থাকে, বাড়তে থাকে যাত্রীর সংখ্যা।

০৫ ২০

যে যাত্রীরা ছাড়ের সুবিধা পাননি, তাঁরা পুরো ভাড়া মেটানোর বিনিময়ে অতিরিক্ত সুবিধা দাবি করতে থাকেন। বিমান সংস্থাগুলিও এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে। কর্তৃপক্ষ মনে করেন, যাঁরা পুরো ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটছেন, তাঁদের অতিরিক্ত সুবিধা প্রাপ্য।

০৬ ২০

একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ১৯৭৫ সালে জাপান এয়ারলাইনস প্রথম যাত্রীদের বিশেষ পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হয়। প্রথম শ্রেণির পাশেই একটি নতুন কেবিন চালু করে বিমান সংস্থা। নাম তাচিবানা কেবিন (অরেঞ্জ ব্লসম)।

০৭ ২০

জাপান এয়ারলাইনসের যে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এই কেবিনে যাতায়াত করতেন, তাঁদের টোকিয়োর ইমপেরিয়াল হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করত সংস্থা। সফরের আগে ওই হোটেলে থেকে বিশ্রাম নিতে পারতেন যাত্রীরা।

০৮ ২০

কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইনস আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল। ওই বছরই তারা এক বিশেষ পরিষেবা চালু করে। যে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিশেষ পরিষেবা চাইতেন, তাঁদের বিমানে চেক-ইনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে দিয়েছিল এই বিমান সংস্থা। নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি এবং আমস্টারডামের স্কিপোল বিমানবন্দরে শুধু এই ব্যবস্থা ছিল।

০৯ ২০

এই সংস্থা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত যাত্রীদের মালও সবার আগে সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। সকলের আগে তাঁদের মাল ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হয়। যাতে তাঁদের অপেক্ষা করতে না হয়। যদিও তখনও ‘বিজ়নেস ক্লাস’ নামটির ব্যবহার শুরু হয়নি।

১০ ২০

বিমান সংস্থাগুলো সত্তরের দশকের শুরুতে এই বিশেষ পরিষেবা চালু করলেও উড়ানের আসনে বদল আনেনি। উড়ানের আসন সকলের জন্য ছিল একই রকম। বাড়তি টাকা দিলেও তার মান উন্নত করা হয়নি। এই কাজটা প্রথম করে ব্রিটিশ এয়ারলাইনস।

১১ ২০

মনে করা হয়, ১৯৭৭ সাল নাগাদ ‘এগজ়িকিউটিভ কেবিন’ চালু করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েস। ইকোনমি ক্লাসে আসনের বিন্যাস থাকত ৩-৪-৩ হিসাবে। অর্থাৎ মাঝে বসবেন চার জন, দু’পাশে তিন জন করে। ব্রিটিশ এয়ারলাইনস তা বদলে ২-৩-৪-এর বিন্যাস করে। যাতে যাত্রীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে পারেন।

১২ ২০

সেই সঙ্গে আরও কিছু সুবিধা যোগ করে ব্রিটিশ এয়ারলাইনস। ‘এগজ়িকিউটিভ কেবিন’-এর যাত্রীদের সকলের আগে খাবার, পানীয় পরিবেশন করা হত। বিমানে উঠলে মুখ মোছার জন্য তাঁদের গরম তোয়ালে দেওয়া হত। আলাদা বালিশও দেওয়া হত। ওই যাত্রীদের ধূমপানের জন্য আলাদা জায়গাও ছিল।

১৩ ২০

দু’বছর পর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় ‘এগজ়িকিউটিভ কেবিন’-এর নতুন নাম দেয়। তখন একে বলা হত ‘ক্লাব ক্লাস’। ওই যাত্রীদের জন্য বিশেষ খাবারেরও ব্যবস্থা করা হত। রানি এলিজাবেথ যা পছন্দ করতেন, তা-ই পরিবেশন করা হত।

১৪ ২০

১৯৭৭ সালে তাই এয়ারওয়েজ়ও বেশি দাম দিয়ে টিকিট কাটা যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা শুরু করে। তারাই প্রথম এই বিশেষ পরিষেবার নাম দেয় ‘বিজ়নেস ক্লাস’। বিজ়নেস ক্লাসের যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছিল না তাই এয়ারওয়েজ়। শুধু সফরের আগে বিমানবন্দরে তাঁরা বিজ়নেস লাউঞ্জে যেতে পারতেন।

১৫ ২০

কেন এই নাম? যাঁরা বেড়ানোর জন্য বিমান ধরতেন, তাঁরা হুল্লোড় করতেন। আর যাঁরা কাজের জন্য বিমান সফর করতেন, তাঁরা একটু নিরিবিলি চাইতেন। একটু বিশ্রাম করতে চাইতেন। মনে করা হয়, এই ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীদের কথা ভেবেই নাকি আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করেছিল বিভিন্ন বিমান সংস্থা। তাই নাম রাখা হয়েছিল ‘বিজ়নেস ক্লাস’।

১৬ ২০

১৯৭৮ সালে প্যান আমেরিকান বিমান সংস্থা ‘ক্লিপার ক্লাস’ নামে বিশেষ পরিষেবা চালু করে। এই যাত্রীদের বিনামূল্যে ওয়াইন দেওয়া হত। সঙ্গে পছন্দের স্ন্যাকস। সঙ্গে হেডফোনও দেওয়া হত যাত্রীদের।

১৭ ২০

ওই বছর এয়ার ফ্রান্সও বেশি দাম দিয়ে টিকিট কেনা যাত্রীদের বিশেষ পরিষেবা দেওয়া শুরু করে। যাত্রীদের সফরকালে বিশেষ ওয়াইন আর চিজ় দিত তারা।

১৮ ২০

যদিও অস্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাস এয়ারলাইনস দাবি করে, তারাই প্রথম ‘বিজ়নেস ক্লাস’ চালু করেছে। সাধারণ যাত্রী আসনের থেকে তাদের বিজ়নেস ক্লাসের আসন ছিল বড়। পা রাখার জন্য ছিল বেশি জায়গা। ইকোনমি ক্লাসের থেকে তাদের বিজ়নেস ক্লাসের ভাড়া ছিল ১৫ শতাংশ বেশি।

১৯ ২০

কোয়ান্টাস সংস্থা বিজ়নেস ক্লাসের যাত্রীদের জন্য আলাদা খাবার এবং পানশালার ব্যবস্থা রেখেছিল। ক্রমে পৃথিবীর বেশির ভাগ এয়ারলাইনসই এই বিজ়নেস ক্লাস পরিষেবা চালু করে।

২০ ২০

আশির দশকে সারা দুনিয়ার বেশির ভাগ এয়ারলাইনস বিজ়নেস ক্লাস চালু করে। এতে সংস্থাগুলির লাভের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement