ফাইল চিত্র।
হিন্দু ধর্ম আর বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্ব আলাদা বলে এ বার নিজেই সওয়াল করলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস নেতাদের মতাদর্শগত প্রশিক্ষণ শিবিরের শুরুতে আজ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, হিন্দু ধর্মে কি শিখ বা মুসলিমদের পেটানোর কথা বলা হয়েছে? কিন্তু রাজনৈতিক হিন্দুত্ব সে কথা বলে। তাঁর প্রশ্ন, হিন্দু ধর্ম কি আখলাককে মেরে ফেলার কথা বলে? রাহুলের বক্তব্য, তিনি উপনিষদ-সহ যাবতীয় হিন্দু ধর্মের বই পড়েছেন। কোথাও নিরীহ মানুষকে খুন করার কথা বলা নেই।
বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে মতাদর্শগত লড়াই দরকার বলে রাহুল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে সওয়াল করেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা মাফিক আজ থেকে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধায় মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর তৈরি সেবাগ্রাম আশ্রমে কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের বাছাই করা নেতাদের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে। তার শুরুতেই ভার্চুয়াল বক্তৃতায় রাহুল বলেছেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুত্ব কি এক? এই দু’টি কি এক হতে পারে? যদি একই হয়, তা হলে তাদের নাম এক নয় কেন? আমরা কেন হিন্দু ধর্ম শব্দ ব্যবহার করি? কেন হিন্দুত্ব শব্দটি ব্যবহার করি না? নিশ্চিত ভাবেই এই দু’টি আলাদা।’’
দু’দিন আগে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ তাঁর অযোধ্যার রায় নিয়ে লেখা বইয়ে এই হিন্দু ধর্মের সঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের রাজনৈতিক হিন্দুত্বর ফারাক করতে গিয়ে তাকে আইএসআইএস-এর জিহাদি ইসলামের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে বিজেপি মেরুকরণের অস্ত্র পেয়ে মাঠে নামায় কংগ্রেসের নেতারা খুরশিদের পক্ষে না বিপক্ষে দাঁড়াবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন।
কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মেনে নিয়েছেন, বিজেপি-আরএসএসের ‘বিভাজন ও ঘৃণার মতাদর্শ’-এর কাছে কংগ্রেসের মৈত্রী, জাতীয়তাবাদের মতাদর্শ ঢাকা পড়ে গিয়েছে। রাহুলের মতে, কংগ্রেসের মতাদর্শ জীবিত, প্রাণবন্ত। কিন্তু তা ঢাকা পড়েছে, কারণ কংগ্রেস তার মতাদর্শ আগ্রাসী ভাবে প্রচার করেনি।
রাহুলের মতে, গুরু নানক বা কবীর যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে কি তাদের হিন্দুত্বের মিল রয়েছে? গাঁধী বা সম্রাট অশোক যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে কি রাজনৈতিক হিন্দুত্বের মিল রয়েছে, সেটা ভাবা জরুরি।
রাহুলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির সম্বিৎ পাত্রের পাল্টা, হিন্দু ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ থেকেই রাহুল তাকে নিশানা করেছেন। এ সব আসলে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। আর সেই রসায়নাগারের হেডমাস্টার হলেন রাহুল। হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুত্বের ফারাক নিয়ে অবশ্য সম্বিৎ সরাসরি জবাব দেননি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “কংগ্রেস কি অন্যান্য ধর্ম নিয়ে একই সুরে কথা বলতে পারবে?’’