গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার সংক্রান্ত মামলার রায় সংরক্ষিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট। কর্নাটক হাই কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে আবেদনের ১০ দিন শুনানির পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
পাশাপাশি, হিজাব পরার অধিকার চেয়ে আবেদনকারী ছাত্রীদের পিছনে কট্টরপন্থী সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’ (পিএফআই)-র ভূমিকা রয়েছে বলে শীর্ষ আদালতে কর্নাটক সরকারের তরফে বুধবার যে অভিযোগ জানানো হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনও পর্যবেক্ষণের কথা জানায়নি দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টে ১০ দিনের শুনানি-পর্বে কর্নাটক সরকারের তরফে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে এম নটরাজ এবং সে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রভুলিং কে নাভাদগি। অন্য দিকে, আবেদনকারী মুসলিম ছাত্রীদের তরফে সলমন খুরশিদ এবং দুষ্যন্ত দাভে শুনানিত অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে কর্নাটকের উদুপির একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে কয়েক জন হিজাব পরিহিত পড়ুয়াকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরিহিতরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না। সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য জুড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসাবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হিজাব ঘিরে সেই বিতর্কের আবহে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পোশাক-নির্দেশিকা জারি করেছিল কর্নাটকের বিজেপি সরকার। কর্নাটক শিক্ষা আইন ১৯৮৩-এর কথা উল্লেখ করে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পোশাক পরেই পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে। তবে যে সব কলেজে কোনও পোশাকবিধি নেই, সেখানে এমন পোশাক পরা যাবে না, যাতে শিক্ষাঙ্গনের ভারসাম্য, ঐক্য এবং শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। আদালতে কর্নাটক সরকার জানিয়েছে, ওই নির্দেশিকার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। হিজাবের পাশাপাশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে গেরুয়া উত্তরীয়ও।
কর্নাটকের বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েক জন মুসলিম ছাত্রী কর্নাটক হাই কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। তাঁরা আদালতকে জানান, হিজাব পরা তাঁদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনও ভাবেই তা বাতিল করা যায় না। কিন্তু গত ১৫ মার্চ কর্নাটক হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে সরকারি নির্দেশিকায় সিলমোহর দেয়। রায়ে বলা হয়, হিজাব পরাকে ধর্মাচরণের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে দেখা ঠিক নয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন কয়েক জন মুসলিম ছাত্রী।