এ বার এনআইএ-র নিশানায় পিএফআই। ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন রাজ্যে হিংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িত কট্টরপন্থী সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’ (পিএফআই)-এর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে অভিযান শুরু করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৩ রাজ্যে শুরু হওয়া এই অভিযানে পিএফআই এবং এসডিপিআই-এর শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনআইএর দেড় দশকের অভিযানে এটাই বৃহত্তম সন্ত্রাস দমন অভিযান।
তিন বছর আগে নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদের সূত্রে দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল পিএফআই-এর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিজেপি মুখপাত্র (বর্তমানে সাসপেন্ডেড) নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের পর উত্তরপ্রদেশে হিংসার ‘মূল ষড়যন্ত্রী’ হিসাবে পিএফআই-কে চিহ্নিত করেছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার অন্য দিকে, বছর দু’য়েক আগে বেঙ্গালুরু-সহ কর্নাটকের বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠীহিংসার ঘটনায় এসডিপিআই এবং ‘আল হিন্দ’-এর মতো কট্টরপন্থী সংগঠনের নাম উঠে এসেছিল।
কেন্দ্রের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত ২৯ অগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পিএফআই-সহ কয়েকটি কট্টরপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন এনআইএ, ‘র’, গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-এর আধিকারিকেরা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, পুডুচেরি, অসম, রাজস্থানের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার এনআইএর তল্লাশি হয়েছে কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে পিএফআই-এর একটি ডেরাতেও।
পার্ক সার্কাসে তল্লাশি চলেছে এনআইএ-র। নিজস্ব চিত্র।
এরই মধ্যে, এনআইএ-র চল্লাশি অভিযান ও ধরপাকড়ের প্রতিবাদে কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবরও এসেছে। পিএফআই-এর তরফে একটি প্রেস বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাদের সংগঠনের জাতীয় ও রাজ্যস্তরের একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
এরই পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইডির আধিকারিকেরা পিএফআই এবং এসডিপিআই-এর বেআইনি সম্পত্তির খোঁজেও তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন কয়েকটি রাজ্যে। প্রসঙ্গত, জুন মাসে পিএফআই এবং তার সহযোগী সংগঠনের ৩৩টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। এর মধ্যে পিএফআই-এর ২৩টি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা এবং রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের ১০টি অ্যাকাউন্টের প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ টাকা রয়েছে।
প্রসঙ্গত,ভারতীয় মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে ২০০৬ সালে পিএফআই গঠিত হয়েছিল। কিন্তু গোড়া থেকেই পিএফআই-এর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে দক্ষিণ ভারতে কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতেও সংগঠনটির সক্রিয়তা বাড়ে। গোয়েন্দাদের মতে, নিষিদ্ধ সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র মুখ হিসেবে হিংসাত্মক কার্যকলাপে গত দেড় দশক ধরে মদত দিয়ে এসেছে পিএফআই। সিমি-র অধিকাংশ সদস্যই পিএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।