বৃষ্টিতে প্লাবিত হরিদ্বারের বহু এলাকা। ছবি: পিটিআই। ছবি: পিটিআই।
উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে গত দু’সপ্তাহেরও বেশ সময় ধরে বৃষ্টির তাণ্ডব চলছে। পশ্চিম ভারতের ছবিটাও ঠিক একই রকম। দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল। বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কোথাও কোথাও। অন্য দিকে, বৃষ্টিতে ভাসছে মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং রাজস্থানও। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের ছবিটা আরও ভয়াবহ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
মহারাষ্ট্র
গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে বৃষ্টি হয়েছে ২০৪ মিলিমিটার। কোলাবাতে বৃষ্টির পরিমাণ ১০৩ মিলিমিটার। আবহাওয়া দফতর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন। অন্য দিকে, পালঘরে ভারী বৃষ্টির জেরে টানা তিন দিন স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই জেলার বহু এলাকা প্লাবিত। মুম্বই এবং ঠাণেতে কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে পালঘরে। মুম্বইয়ে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির জেরে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থাতেও প্রভাব পড়েছে। ট্রেন পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে। ভাসাইতে বৃহস্পতিবার খোলা নালায় পড়ে দু’জনের তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে। পুণের পাহাড়ি এলাকা, কোঙ্কণ অঞ্চল এবং মধ্য মহারাষ্ট্রে শনিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। এ ছাড়াও বিদর্ভের বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টির চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
দিল্লি
দিল্লিতে নতুন করে ভারী বৃষ্টি না হলেও যমুনার জল কিন্তু এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রাজধানীর কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন।
উত্তরাখণ্ড
একের পর এক মেঘভাঙা বৃষ্টি, ধস এবং হড়পা বানে নাজেহাল উত্তরাখণ্ড। প্রবল বৃষ্টির জেরে হরিদ্বারের বেশ কিছু জেলা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও রুরকি, লকসর, ভগবানপুর এবং হরিদ্বার তহসিলের ৭১টি গ্রাম জলের তলায়। বহু পরিবার ঘরছাড়া। ৮১টি পরিবারকে ত্রাণশিবিরে পাঠানো হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি হরিদ্বারকে ‘দুর্যোগ প্রবণ’ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছেন। বহু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেসে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বদ্রীনাথ ধামে যাওয়ার রাস্তা ধসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লম্বাগড় এবং কাঞ্চনগঙ্গা বদ্রীনাথ জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে। উত্তরকাশীতে ধস নামায় হৃষীকেশ-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কে ধারাসুতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কর্ণপ্রয়াগ-গেইরসাই জাতীয় সড়কের বেশ কিছু জায়গা ভেসে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চামোলি জেলায় বদ্রীনাথ জাতীয় সড়কের পাঁচ জায়গায় রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অলকানন্দা বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।
হিমাচল প্রদেশ
শনিবার এই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা দিয়েছে মৌসম ভবন। ২৩-২৫ জুলাইয়ের মধ্যে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। চম্বা, কাংড়া, শিমলা, কুলু, মান্ডি, বিলাসপুর, সোলান, সিরমুর জেলায় অতি ভারী বৃষ্টি হবে এই সময়ের মধ্যে। অন্য দিকে, শনিবার উনা, হামিরপুর, লাহুল এবং স্পিতি, কিন্নৌর জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। হিমাচল প্রদেশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ২৪ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি, ধস বন্যা পরিস্থিতিতে ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজস্থান
রাজস্থানের ১৪টি জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার থেকে মৌসুমী বায়ু আরও সক্রিয় হবে ওই রাজ্যে। চিতোরগড় এবং প্রতাপগড় জেলায় ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২২ জুলাইয়ের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টি বাড়বে। গত ২৪ ঘণ্টায় জয়সলমের, রাজসমন্দ, অজমের, বাঁশওয়ারায় এবং জালোর বৃষ্টি হয়েছে। ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে জালোরে। ১ জুন থেক ১৯ জুলাই পর্যন্ত রাজস্থানে ২৮২.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ওড়িশা
প্রবল বৃষ্টিতে শুক্রবারে ওড়িশায় বাড়ি ভেঙে তিন জন আহত হয়েছেন। অন্ধ্রপ্রদেশে, ছত্তীসগঢ় এবং তেলঙ্গানার সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী ৩১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের অনেক জায়গা জলের তলায় চলে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, নবরংপুর, নওপাড়া, কালাহান্ডি, বোলাঙ্গির জেলায় শনিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। অন্য দিকে, মালকানগিরি, কোরাপুট, কন্ধমাল, সম্বলপুর, দেওগড়, কেওনঝড়, ময়ূরভঞ্জেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।