উত্তাল আরব সাগর। ছবি: রয়টার্স।
বিপর্যয় স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুজরাতের কচ্ছ জেলার চার শহরে বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। সতর্ক থাকতেই এই পদক্ষেপ।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আইজি নরেন্দ্র সিংহ বুন্দেলা জানিয়েছেন, মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হবে বিপর্যয়। তখন ঝোড়ো হাওয়ার গতি থাকবে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। তিনি মনে করছেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ভারী বৃষ্টির জন্য বন্যা হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের কারণে গুজরাতের নবসারি জেলার সব স্কুল বন্ধ থাকবে শুক্রবার। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন জেলাশাসক।
আশঙ্কা ছিল। তাই আগেভাগেই উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের কারণে প্রাণহানি হয়নি গুজরাতে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ গুজরাত উপকূলে আছড়ে পড়ে বিপর্যয়। তখন ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটার হতে পারে। ঝড়ের কারণে জামনগরে বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের চোখের ব্যাস প্রায় ৫০ কিলোমিটার। মধ্যরাত নাগাদ স্থলভাগে আছড়ে পড়বে এই চোখ। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যভাগে থাকে এই চোখ। সাধারণত ৩০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার হয় ব্যাস।
বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে পারে কেরল উপকূলেও। রাতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভিঝিনজাম থেকে কাসারাগোড় পর্যন্ত উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে প্রবল ঢেউ। ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে ৩ থেকে ৩.৩ মিটার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুজরাতের সৌরাষ্ট্র উপকূলে জখাউ বন্দরের কাছে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এই আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া। মৌসম ভবন জানিয়েছে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার হতে পারে।
মৌসম ভবনের শেষ প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, বিকেল সাড়ে ৫টার সময় জখাউ বন্দরের ৭০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে, দ্বারকার ১৩০ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে বিপর্যয়। বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা।
ক্রমেই গুজরাত উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে বিপর্যয়। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, উপকূল থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে
সন্ধ্যা নাগাদ জখাউ বন্দরে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ১০০ কিলোমিটারের বেশি। মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে ঝড়ের তাণ্ডব। মাণ্ডবী এবং দ্বারকায় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে প্রবল ঝড়।
গুজরাতের জামনগর বিমানবন্দরে শুক্রবার পর্যন্ত বিমানের ওঠানামা বন্ধ থাকবে। জরুরি ভিত্তিতে যদি বিমানবন্দর চালু করতে হয়, তার জন্য আগে থেকেই মজুত করা হয়েছে জ্বালানি।
মৌসম ভবনের শেষ বুলেটিন জানিয়েছে, দুপুর সাড়ে ৩টের সময় গুজরাতের জখাউ বন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দ্বারকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জখাউ বন্দরে আছড়ে পড়তে চলেছে সে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে পারে ল্যান্ডফলের প্রক্রিয়া।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় গুজরাতের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সরানো হয়েছে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। যদিও পোষ্যদের রেখে যেতে হয়েছে বাড়িতেই। পোষ্যদের খাওয়াতে তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি ফিরলেন বহু মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে গান্ধীনগরে রাজ্য এমার্জেন্সি অপারেশন কেন্দ্রে বৈঠকে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। বৈঠকে রয়েছেন সরকারি আধিকারিকেরাও। পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছেন তিনি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে চলেছে পাকিস্তানেও। সে দেশের দক্ষিণে সিন্ধ প্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ৬২ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ভারতীয় নৌবাহিনী। সব রকমের সাহায্য নিয়ে সমুদ্রে মোতায়েন রয়েছে নৌবাহিনীর চারটি জাহাজ। পোরবন্দর এবং ওখায় তাদের পাঁচটি করে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। ভালসুরাতে ত্রাণের জন্য মোতায়েন রয়েছে ১৫টি দল।
ঘূর্ণিঝড় ক্রমেই এগিয়ে আসছে স্থলভাগের দিকে। বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখা হয়েছে দ্বারকাধীশ মন্দির। তবে ভোগ, আরতি হবে। অনলাইনে দর্শন করতে পারবেন ভক্তেরা। দ্বারকা বাজারও বন্ধ থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে গুজরাত উপকূলবর্তী এলাকায়। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সীমান্ত দিয়ে যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে দিকে সজাগ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিএসএফ আইজি রবি গান্ধী জানিয়েছেন, সীমান্তে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, মাণ্ডবী থেকে করাচি পর্যন্ত এলাকায় সব থেকে বেশি প্রভাব পড়বে ঘূর্ণিঝড়ের। তাই সে দিকে নজর দিয়েছে বাহিনী। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার কথাও জানিয়েছে।