জলপথ: মুম্বইয়ের বহু রাস্তাতেই এমন ছবি। তার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা। ছবি: পিটিআই
করোনা ছিলই। মুম্বইয়ের জনজীবনে তার সঙ্গে যোগ হল প্রায় প্রতি বছরের রুটিন জলযন্ত্রণা। রাতভর অতি ভারী বৃষ্টিতে বানভাসি বাণিজ্য নগরী। তার জেরে শহরের সমস্ত অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কার্যত বন্ধ সব যানবাহন। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাসের জেরে মুম্বই-সহ লাগোয়া কয়েকটি জেলায় আজ মঙ্গলবার ও বুধবার জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। তার উপর আবার দুপুরের দিকে জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনাও রয়েছে। তখন দুর্ভোগ আরও বাড়ার আশঙ্কা।
বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি)-এর তরফে সমস্ত অফিস বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। টুইট করে শহরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘‘রাতভর অতি ভারী বৃষ্টির কারণে এবং মৌসম ভবন আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় জরুরি পরিষেবা ছাড়া শহরের সমস্ত অফিস মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।’’ এ ছাড়া বহু বাস বন্ধ। যেগুলি রাস্তায় নেমেছিল, সেগুলিও অনেক ঘুরে এবং দেরিতে চলছে বলেও জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, মুম্বইয়ের অন্তত ২৬টি জায়গা জলমগ্ন। কোথাও হাঁটু জল, তো কোথায় বুক সমান জলও জমেছে। গোরেগাঁও, কিং সার্কেল, হিন্দমাটা, দাদর, শিবাজি চক, শেষ কলোনা, কুরলা বাস ডিপো, বান্দ্রা টকিজ, সিয়ন রোডের মতো এলাকা কার্যত জলের তলায়।
আরও পড়ুন: সুশান্তের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ বিহার সরকারের
এ ছাড়া শহরতলির কান্দিভেলি এলাকায় ওয়েস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়েতে মঙ্গলবার সকালে ধস নেমেছে। তার জেরে পশ্চিম শহরতলি থেকে দক্ষিণ মুম্বইয়ে যাওয়ার রাস্তায় যান চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত মুম্বইযে বৃষ্টি হয়েছে ২৩০.০৬ মিলিমিটার। পূর্ব ও পশ্চিম শহরতলিতে এই পরিমাণ ১৬২.৮৩। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মৌসম ভবনের মঙ্গলবার সকালের পূর্বাভাসে আরও অন্তত ২৪ ঘণ্টা দুর্যোগ চলবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অবিরাম অতি ভারী বৃষ্টি চলবে বলেও হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে। বাণিজ্যনগরীর পাশাপাশি শহরতলিতেও বহু জায়গা জলমগ্ন। সেই কারণে ঠাণে, পুণে, রাইগড় ও রত্নগিরি জেলাতেও লাল সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার আট শতাংশের কম, সুস্থ ৪৪ হাজার
মুম্বইয়ে মঙ্গলবার জোয়ারের সময় ১২টা ৪৭ মিনিট। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই সময় ৪.৫১ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তাই ওই সময় উপকূল এবং নীচু এলাকার বাসিন্দাদের আরও সতর্ক থাকতে বলেছে বিএমসি। সমুদ্রে উপকূলে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্য দিকে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্র উপকূল জুড়েই ঝোড়ো হাওয়া চলবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন।
বাণিজ্যনগরীর এই জলছবি অবশ্য নতুন নয়। প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার মরসুমে টানা বৃষ্টির জেরে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার সাক্ষী থাকে মুম্বই। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত একাধিক বারও বানভাসি হয় কোনও কোনও বছর। এ বছর আবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস। দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। রাজ্যে মোট আক্রান্ত সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি মানুষ। এখনও সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৪ জন। তার সঙ্গে এই জলবন্দি মুম্বইয়ের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক গুন।