সংসদের উঠোনে হিন্দুত্বের ভোজ

উপলক্ষ নববর্ষ। লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সাংসদদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মধ্যাহ্নভোজনে। সংসদ ভবনের উঠোনে এক দিকে নিরামিষ মেনু। ভাত-রুটি-তরিতরকারি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৭
Share:

উপলক্ষ নববর্ষ। লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সাংসদদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মধ্যাহ্নভোজনে। সংসদ ভবনের উঠোনে এক দিকে নিরামিষ মেনু। ভাত-রুটি-তরিতরকারি। অন্য দিকে যাঁরা নবরাত্রির ব্রত করছেন, তাঁদের জন্য সাবুদানার তৈরি খাবার।

Advertisement

অন্নদাতার নিন্দা করতে নেই। কেউ মুখে কিছু বললেন না। কিন্তু এই প্রথম সংসদে ঘটা করে ‘বিক্রম সম্বৎসর’ উদযাপন দেখে প্রশ্নটা ঘুরপাক খেলই— বিজেপি কি তবে সংসদেও হিন্দু সংস্কৃতি ঢুকিয়ে ফেলল?

নরেন্দ্র মোদী কিছু মুখে তোলেননি। কারণ চৈত্র নবরাত্রিতে তিনি ন’দিন উপবাস করেন। লেবুর রস দেওয়া গরম জল খেয়ে দিনের বেলাটা কাটান। সন্ধেয় ফলমূল। ২০১৪-য় আমেরিকা সফরেও সেই পরম্পরা ভাঙেননি তিনি।

Advertisement

এ ব্যাপারে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে তাঁর খুব মিল। প্রতি বছরই এই কয়েকটা দিন কঠিন অনুশাসন মেনে চলেন যোগীও। ভোর ৩টে নাগাদ উঠে ‘দুর্গা সপ্তশতি’ পড়েন। দিনে এক বার কেবল শুকনো ফলমূল, আলু এবং বাজরা থেকে তৈরি খাবারদাবার খান। দীর্ঘ চার দশক ধরে এই রুটিনই চলছে। এ বারও মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে তেমনটাই হবে।

এ দিকে শনি থেকে আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার পর্যন্ত লোকসভায় রামনবমীর ছুটি ঘোষণা করেছেন স্পিকার। বন্ধ থাকবে রাজ্যসভাও। আরএসএস এবং সঙ্ঘ পরিবার হিন্দু নববর্ষকেই ‘ভারতীয় নববর্ষ’ হিসেবে দেশ জুড়ে উদযাপন করেছে। স্পিকারের মধ্যাহ্নভোজনেও অনেক বিজেপি নেতা অন্য দলের নেতাদের ভারতীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। হাসি মুখে শুভেচ্ছা ফিরিয়েও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘হিন্দু নববর্ষ’-কে নববর্ষের তকমা দিয়ে ফেলাটা কতখানি যুক্তিযুক্ত!

সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘বিক্রম সম্বৎসরকে হিন্দু নববর্ষ বলি কী করে! হিন্দু শব্দটাই তখন তৈরি হয়নি। একে কোনও ভাবেই ভারতীয় নববর্ষ বলা যায় না। কারণ ইংরেজি ক্যালেন্ডারের বাইরে দেশের একেক জায়গায় একের সময় নববর্ষ পালন হয়।’’ সেলিম উদাহরণ দেন, গুজরাতে নববর্ষের শুরু দীপাবলির পর থেকে। ‘‘গুজরাত কি তা হলে ভারতের বাইরে,’’ প্রশ্ন তাঁর।

কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদী মধ্যাহ্নভোজনে দোষ ধরতে চান না। কিন্তু তাঁরও যুক্তি, বিক্রম সম্বৎসরকে ভারতীয় নববর্ষ বলাটা বাড়াবাড়ি।

এর মধ্যে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির চিনায়া শেট্টি। স্পিকারকে তিনি বললেন, ‘‘আজকের দিনে গেরুয়া ব্লাউজ পরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’’ সুমিত্রা রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। ভোজশেষে তাই আর এক সাংসদ মুচকি হাসলেন, ‘‘আগামী নববর্ষ কি রাষ্ট্রপতি ভবনে পালন হবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement