Coronavirus

কোভিড-যুদ্ধ: দিল্লিতে করোনার ঘোড়া কি আটকে দিলেন অমিত শাহ?

গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় রোজই আক্রান্তের সংখ্যা কমছে দিল্লিতে। এবং এর কৃতিত্ব অনেকাংশেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের, বলছে দিল্লির বড় অংশই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ১১:২৩
Share:

কী এমন করলেন শাহ, যাতে সংক্রমণের লেখচিত্র ঘাড় গুঁজে নীচের দিকে নামল?

আশঙ্কা ছিল জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সাড়ে ৫ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলবে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। দেশের রাজধানীতে কোভিড মোকাবিলার দায়িত্ব যাঁর উপরে ছিল, দিল্লির সেই উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া নিজেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ৯ জুন। সিসৌদিয়ার উল্লেখ করা সেই সময়সীমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে কিন্তু অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে দিল্লিতে। আশঙ্কা যা ছিল, মোটামুটি তার ২০ শতাংশেই আটকে রাখা গিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় রোজই আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। এবং এর কৃতিত্ব অনেকাংশেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের, বলছে দিল্লির বড় অংশই।

Advertisement

‘স্ট্র্যাটেজিস্ট’ বা রণকৌশল নির্ধারক হিসেবে নিজের দলে তাঁর সুনাম রয়েছে অনেক দিন ধরেই। দক্ষ রণকৌশলী হিসেবে নিজেকে অনেক বার প্রমাণও করেছেন তিনি রাজনীতির ময়দানে। কিন্তু শুধু রাজনীতিক হিসেবে নয়, প্রশাসক হিসেবেও যে তিনি দড়, দিল্লির কোভিড মোকাবিলা অভিযানের রাশ হাতে নেওয়ার এক মাসের মধ্যেই তার প্রমাণ অমিত শাহ কিছুটা হলেও দিলেন। দেশের রাজধানীতে যে রকম বেলাগাম হয়ে পড়ছিল সংক্রমণের গতি, তাতে কিন্তু বাঁধ দেওয়া গিয়েছে। পরিসংখ্যান অন্তত সে কথাই বলছে। সমন্বয়, টিমওয়ার্ক, পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং অনর্গল নজরদারিতেই এই সাফল্য, বলছেন দিল্লিতে কোভিড মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক এবং স্বেচ্ছাসেবীরা।

অরবিন্দ কেজরীবাল-মণীশ সিসৌদিয়ার সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’, তা সুবিদিত। ফলে উপরাজ্যপাল পদে যে-ই থাকুন, গত কয়েক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে দিল্লির সরকারে মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসছে প্রায় পদে পদে। কোভিড মোকাবিলার প্রশ্নেও সেই বিরোধ দূরে সরিয়ে রাখা যায়নি। কেজরীবালের উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া হিসেব কষে জানিয়েছিলেন, জুলাই মাসের শেষ নাগাদ দিল্লিতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৫০ হাজারে পৌঁছে যাবে। মনগড়া হিসেব দেননি সিসৌদিয়া। যে হারে সংক্রমণ বাড়ছিল, তার ভিত্তিতেই ওই সংখ্যা দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন। দিল্লিতে চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাব দেখা দেবে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। অতএব কেজরী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, দিল্লিতে শুধু দিল্লিবাসীদেরই চিকিৎসা হবে, বাইরের কারও চিকিৎসা দিল্লিতে হবে না।

Advertisement

সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাধ সাধেন উপরাজ্যপাল অনিল বৈজল। সঙ্ঘাত তুঙ্গে পৌঁছয়। ফলে কেজরীবালের সরকারের তরফ থেকে দিল্লিতে কোভিড মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা সিসৌদিয়া হাত তুলে নেন। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা থেকে দিল্লি সরকার নিজেকে প্রায় পুরোপুরি সরিয়ে নেয়। সঙ্কট যখন এই রকম জটিল, তখনই আসরে নামানো হয় অমিত শাহকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশেই শাহ এই দায়িত্ব নেন। নির্বাচনে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে দলকে বেশ কিছু আসন পাইয়ে দেওয়া আর কোভিডের মতো অতিমারির মোকাবিলা এক নয়— কটাক্ষ শোনা গিয়েছিল কোনও কোনও শিবির থেকে। অমিত শাহকে আসরে নামিয়ে কতটা কাজ হবে, সংশয় প্রকাশ করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু শাহ দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক এক মাস পরে দিল্লির করোনা পরিস্থিতির ছবি কিন্তু সত্যিই অন্য রকম। ৯ জুন মণীশ সিসৌদিয়ার চোখের সামনে লেখচিত্রের রেখা যে রকম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ধরা দিয়েছিল, জুলাইয়ের মাঝখানে পৌঁছে কিন্তু আর সে রকম নয় ছবিটা। সংক্রমণের লেখ ক্রমশ নিম্নগামী।

১৬ জুলাইয়ের হিসেব বলছে, দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৯৩। অর্থাৎ বড় অঘটন না ঘটলে সিসৌদিয়ার ভবিষ্যদ্বাণীর ধারেকাছেও পৌঁছবে না জুলাই শেষের ছবিটা। কিন্তু এর কৃতিত্ব অমিত শাহের কেন? কী এমন করলেন তিনি, যাতে সংক্রমণের লেখ ঘাড় গুঁজে নীচের দিকে নামল?

দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের জন্য দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা শুরু করে ‘টিম অমিত শাহ’। ছবি পিটিআই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, সমন্বয় তৈরির কাজটা সর্বাগ্রে করেছেন শাহ। প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লি সরকার এবং দিল্লির নগর নিগমের মধ্যে। তার পরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করে রাজনৈতিক স্তরে। সমন্বয়টা সেরেই নীতি আয়োগের কর্তা, এমসের ডিরেক্টর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে হাই-প্রোফাইল ‘টিম’ তৈরি করে ফেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই টিমের উপরে দায়িত্ব বর্তায় দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার রণকৌশল তৈরি করে ফেলার। তার জন্য কেন্দ্র, রাজ্য, পুরসভা বা যে কোনও সরকারি সংস্থার তরফ থেকে যে রকম সাহায্য লাগবে, সব মিলবে— আশ্বাস দেন শাহ। এই কাজটা করা কিন্তু কেজরীবাল বা সিসৌদিয়ার পক্ষে কঠিন ছিল। অমিত শাহ যে পদে রয়েছেন, সেখান থেকে এই ধরনের সমন্বয় তৈরি করা সম্ভব, কারণ গোটাটাই তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে। দিল্লির মতো একটি রাজ্যের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সেটা সম্ভব নয় সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণেই।

দায়িত্ব নিয়েই শুরুতেই প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের জন্য দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা শুরু করে ‘টিম অমিত শাহ’। তার পরে শুরু হয় দ্রুত পরিকাঠামো বাড়ানো। রেল মন্ত্রক, স্বাস্থ্য মন্ত্রক, আধাসেনা এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে জুড়ে নেওয়া হয় দিল্লির কোভিড মোকাবিলা নেটওয়ার্কে। শাহের এই বিপুল ব্যবস্থাপনায় কতটা বদলাল ছবিটা? কয়েকটা সংখ্যার দিকে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

১ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত আড়াই মাসে প্রতি দিন গড়ে ২ হাজার ৮০০ জনের কোভিড পরীক্ষা হচ্ছিল দিল্লিতে। ১৫ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সেই গড় ১৭ হাজার। ৮ জুলাইয়ের পরে সেই গড় বেড়ে ২০ হাজারে পৌঁছে গিয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে।

১৪ জুন পর্যন্ত দিল্লিতে কোভিড চিকিৎসার জন্য শয্যা ছিল ৯ হাজার ৯৩৭টি। এখন তা পৌঁছে গিয়েছে ৩০ হাজারে। এর মধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং আধাসেনাই ১৯ হাজার শয্যার দেখভাল করছে।

শুধু চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করা অবশ্য যথেষ্ট ছিল না দিল্লির জন্য। চিকিৎসার আকাশছোঁয়া খরচ কমানোটাও জরুরি ছিল বলে দিল্লিবাসীদের অনেকেরই মত। কারণ শুরুর দিকে দিল্লিতে আইসোলেশন বেডের ভাড়া ছিল ২৪-২৫ হাজার টাকা। ১৪ জুনের পর থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮-১০ হাজার টাকায়। আগে ভেন্টিলেটরহীন আইসিইউ বেডের জন্য রোজ গুণতে হচ্ছিল ৩৪ হাজার থেকে ৪৩ হাজার পর্যন্ত। এখন তা ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজারেই মিলছে। ভেন্টিলেটর-সহ আইসিইউ-এর খরচ ছিল ৪৪ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকা। এখন তা মিলছে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজারে। পিপিই কিট এবং ওষুধের দাম ধরেই কিন্তু এই খরচ। ১৪ জুনের আগে পর্যন্ত পিপিই কিট এবং ওষুধের দাম আলাদা দিতে হচ্ছিল।

আরও পড়ুন: শুরু হয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ, বলছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন

সরকারি সংস্থা, আধাসেনার পাশাপাশি দিল্লির কোভিড অভিযানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সামাজিক সংগঠন এবং অনেকগুলো অসরকারি সংস্থাকেও জুড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত খুব কাজে এসেছে। বলছেন দিল্লির পরিস্থিতিকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা বিশেষজ্ঞরা। আক্রান্তদের চিহ্নিত করতে এবং সংক্রমণের পরিমাণ আঁচ করতে সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি এই সব স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে নামানো শুরু হয় অমিত শাহের ব্যবস্থাপনায়। একেবারে দরজায় দরজায় পৌঁছে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া চলতে থাকে। ফলে অলক্ষ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়াটা বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। দ্রুত চিহ্নিতকরণ এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়।

দিল্লির সরকার যে হোম আইসোলেশন নীতি নিয়েছিল, তা-ও বদলে ফেলা হয় অমিত শাহ দায়িত্ব নেওয়ার পরেই। উপসর্গ বা অসুস্থতা গুরুতর না হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই, বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকুন— পরামর্শ ছিল সিসৌদিয়াদের। কিন্তু এই আইসোলেশনে কী করণীয় এবং কী করা উচিত নয়, সে সব খুব স্পষ্ট করা হয়নি তখন। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছিল। আক্রান্তদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিপন্ন হয়ে পড়ছিলেন। শাহের টিম সুনির্দিষ্ট আচরণবিধি তৈরি করে দেয়। হোম আইসোলেশনে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা এবং প্রয়োজন পড়লেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও তৈরি রাখা হয়। অসুস্থ বা কোয়রান্টিনে থাকাকালীন বাড়ি থেকে বেরনোর প্রয়োজনই যাতে কারও না হয়, তা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো হয়।

দিল্লির সরকার যে হোম আইসোলেশন নীতি নিয়েছিল, তা-ও বদলে ফেলা হয় অমিত শাহ দায়িত্ব নেওয়ার পরেই। ছবি- পিটিআই।

এ ছাড়া প্রত্যেক এলাকার সঙ্গে কোনও না কোনও হাসপাতালকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লিতে। ফলে হাসপাতাল পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন কোভিড সেন্টারে প্রায় প্রত্যেকটা বেডকে সিসিটিভি নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, প্রত্যেকে ভাল মানের খাবার পাচ্ছেন কি না, নজরদারি চালানো শুরু হয়েছে সিসিটিভির মাধ্যমে। যে সব কোভিড সেন্টারে ক্যান্টিন কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন, বিভিন্ন ফুড চেন থেকে সেখানে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।

করোনা-যোদ্ধাদের পাশেও দাঁড়ানো বা মনোবল জোগানোর চেষ্টাও খানিকটা করেছে ‘টিম-শাহ’। চিকিৎসক হন বা নার্স, ক্যান্টিনকর্মী হন বা সাফাইকর্মী, কোভিডের সঙ্গে লড়তে লড়তে যাঁরা ক্লান্ত, তাঁদের দেখভালের ব্যবস্থা হয়েছে। কাউন্সেলিং চলছে নিয়মিত। ১৪ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত করোনায় মৃতদের শেষকৃত্য নিয়েও নানা সমস্যা হচ্ছিল বলে খবর। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা না থাকায় দিনের পর দিন মৃতদেহ পড়ে থাকছিল, শেষকৃত্য হচ্ছিল না। গত এক মাসে কিন্তু সে ছবিও বদলে গিয়েছে। ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শেষকৃত্যের ব্যবস্থা হচ্ছে এবং দ্রুতই সে সব মিটছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত প্রায় ৩৯ হাজার, শুধু মহারাষ্ট্রেই সংক্রমিত তিন লক্ষ

দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেখে সেখানকার ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টি (আপ) যে শাহের ভূয়সী প্রশংসা শুরু করেছে, এমন কিন্তু নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার কারণে অমিত শাহের হাতে কত বেশি ক্ষমতা রয়েছে এবং দিল্লি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য না হওয়ার কারণে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটা কম, সে কথাই বরং এখন বেশি করে তুলে ধরছে আপ। শুধুমাত্র ক্ষমতার এই সীমাবদ্ধতার কারণেই আপ সরকার পরিস্থিতি সামলাতে পারছিল না, এ কথা মানতে দিল্লিবাসীদের অনেকেই রাজি নন। তবে কেজরীবাল-সিসৌদিয়াদের এক্তিয়ার যে সীমাবদ্ধ এবং তার কারণে বেশ কিছু জায়গায় সমন্বয়ের সমস্যা যে হচ্ছিল, সে কথা বিজেপি নেতারাও ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন।

উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানা দু’পাশ থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে দিল্লিকে। এক এক রাজ্য এক এক রকম নীতি নিয়ে চলছিল, যাতায়াতের উপরে এক এক রকম বিধিনিষেধ আরোপিত হচ্ছিল, লকডাউন বিধিতেও ফারাক থাকছিল। সেই ধন্দে দিল্লির নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হচ্ছিল। এই সমস্যার সমাধান করা কেজরীবালের পক্ষে সম্ভবও ছিল না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে তিন মুখ্যমন্ত্রী মধ্যেই সমন্বয় করে ফেলেন। দিল্লিকে সুস্থ রাখার জন্য উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার অংশবিশেষকেও রণকৌশলের অংশীদার করে নেন। অতএব গোটা জাতীয় রাজধানী অঞ্চলেই (এনসিআর) কোভিড মোকাবিলার কাজ একই ছন্দে শুরু হয়।

এর ফল কী হয়েছে? ২৬ জুনের পর থেকে প্রায় রোজই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। ১৫ জুন দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৪৭। দিল্লির মতোই সাংঘাতিক ভাবে আক্রান্ত হওয়া আর এক মহানগর চেন্নাইতে সে দিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৪৩। ২৬ জুন দিল্লিতে সংখ্যাটা ছিল ৩ হাজার ৪৬০। চেন্নাইতে ৩ হাজার ৬৪৫। পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন দিল্লিতে লেখচিত্র নীচের দিকে। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৯৪৮। চেন্নাইতে ঊর্ধ্বমুখী— ৩ হাজার ৭৪৩। আর ১৩ জুলাইতে এসে দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নেমেছে ১ হাজার ২৪৬-এ। চেন্নাইতে সেই সংখ্যা ৪ হাজার ৩২৮।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement